Dead Body Identified After 65 Years From Murder: ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭ সাল। আমেরিকার পেন্সিলভেনিয়া রাজ্যে অবস্থিত ফিলাডেলফিয়া জঙ্গলে এক শিকারি একটি কৌটো পায়। শিকারী যখন ওই কৌতুহলি হয়ে কৌটো খোলেন তখন তাঁর মাথা খারাপ হয়ে যায়। ওই কৌটার মধ্যে একটা ছোট বাচ্চার লাশ পড়েছিল। তিনি মনে করেন যে যদি তিনি পুলিশকে এ বিষয়ে কিছু জানান। তাহলে তাকে নানা রকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হবে। তিনি পুলিশের ঝামেলায় যেতে চাননি এ কারণে তিনি ফেলে দিয়ে চলে আসেন। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭ সালে দুজন ব্যক্তি জঙ্গলের ওই জায়গা দিয়ে পার হচ্ছিলেন। তাঁরাও ওই কৌটোটা পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা দেখেন যে বাচ্চার মাথা এবং কাঁধ ওই কৌটো থেকে বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। তাঁরাও এই ঘটনা দেখেও সেটি এড়িয়ে যান তাঁরা। পরে রেডিওতে একটি বাচ্চার মিসিং কেস শোনেন। তখন তাঁরা মনে করেন যে ওই বাচ্চাটি হয়তো ওই কৌটোর বাচ্চা হতে পারে।তাঁরা তখনই পুলিশকে ফোন করে জানান যে এখানে জঙ্গলে একটা বাচ্চার লাশ পড়ে রয়েছে। তাঁরা অবশ্য সেটা বুঝতে পারেননি যে সেটি ছেলে না মেয়ে।
ব্লান্ট ফর ট্রমা
পুলিশ তাদের কথা শুনে সেখানে পৌঁছান। বুঝতে পারেন যে ওই লাশ কোন মেয়ে নয়, ছেলের। এখন এখানে পুলিশের সামনে নতুন মামলা সামনে চলে আসে যে এই বাচ্চাটি তাহলে কে? দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এর বক্তব্য অনুযায়ী পুলিশ এ বিষয়টি নিয়ে নতুন মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। তাঁরা মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠায়, কিন্তু বাচ্চাটির শনাক্ত করা যায়নি। এ কারণে এই অজ্ঞাত বাচ্চার নামটি পুলিশ জন টু রেখে দেয়। যাতে এই নামের মামলার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সামনে আসার পর জানা যায় যে বাচ্চাটির মৃত্যু ব্লান্ট ফর ট্রমা এর কারণে হয়েছে।
বাচ্চাটি মাথায় চারটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে
বাচ্চাটির মাথায় চারটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। দুটি চিহ্ন অত্যন্ত পুরনো। কিন্তু দুটি তাজা বলে পুলিশ বুঝতে পারে। এখান থেকে জানা যায় যে বাচ্চাটির শরীরের সমস্ত রক্ত বের করে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া পুরনো জখম দেখে বোঝা যায় যে বাচ্চাটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চলছিল।
বাচ্চাটি শনাক্ত করা যায়নি
পুলিশ এবং চিকিৎসকরা ফের বাচ্চাটি শরীর যাচাই করে বুঝতে পারে যে মরার আগে বাচ্চাটিকে অনেকক্ষণ জলে চুবিয়ে রাখা হয়েছিল। ওই কৌটোতে পাওয়া যায় স্টোর এর নাম এবং এড্রেস। বাচ্চাটি শনাক্ত করতে নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করেও পুলিশ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। শেষমেষ ওই কৌটোতে যেটাতেই বাচ্চাটিতে ডুবিয়ে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল এবং যে কম্বলে তাকে জড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই কম্বল এবং কৌটোর মধ্যে স্টোরের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়। পুলিশ সেগুলি নিয়ে স্টোরে গিয়ে যোগাযোগ করে। একটি স্টোর থেকে এই কৌটো টি কেনা হয়েছিল বলে জানা যায়। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায় যে ওই কৌটোটি তারা ২৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬ সাল থেকে নিয়ে ১৫ই জানুয়ারি ১৯৫৭ সালের মধ্যে বিক্রি করেছিলেন। কৌটোর ভিতর বাচ্চাদের স্নান করানোর টব পাওয়া যায়। ওই সময় তারা বারোটি টব এরকম বিক্রি করেছিলেন। এখন পুলিশ এই ১২ জন লোককে খুঁজতে শুরু করে কিন্তু তারা ১২ জনের মধ্যে আট জন কে খুঁজে বের করতে পারেন। এরপরেও বাচ্চাটির হদিশ করা যাচ্ছিল না। বা কে বা কারা ওই কৌটোটি কিনেছিল তাও জানা যায়নি. এরপর পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ভুল খবর ছড়িয়ে দেবে। যাতে হতে পারে কোন তথ্য মেলে। যদিও তাতেও কোন লাভ হয়নি।
মামলা খোলে ফের ১৯৯৮ সালে
এই ঘটনার দীর্ঘদিন পরেও ১৯৯৮ সালে পুলিশ মনে করে যে এই মামলায় কাজ করে আর কোনও লাভ নেই। তবু একবার শেষ চেষ্টা করা যাক। এ কারণে সরকারের কাছে পারমিশন নিয়ে তারা কবর খোঁড়ে এবং বাচ্চাটির ডিএনএ স্যাম্পেল জোগাড় করে। কিন্তু পুলিশের এই চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কারও সঙ্গে মেলেনি ডিএনএ। এরপরে এই কেস বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১৬ সালে ফের কেস খোলে
নতুন পদ্ধতিতে টেকনোলজির সাহায্যে পুলিশ বাচ্চাটির ছবি তৈরি করে। এরপর ওই বাচ্চাটির পরিচয় এর জন্য ফটোর সাহায্যে লোকেদের কাছে আবেদন জানাতে শুরু করে যে বাচ্চাটাকে কেউ চেনেন কি না। কিন্তু তারপরও কোন লাভ হয়নি।
অবশেষে ২০২২ সালে মেলে পরিচয়
৬৫ বছর পরে শেষমেষ বাচ্চাটির পরিচয় মেলে। সিএনএন এর বক্তব্য অনুযায়ী এরপর ৬৫ বছর পর ২০২২ সালের শেষমেষ পুলিশ এই বাচ্চাটির শনাক্ত করতে সমর্থ হয়। আসলে এবার ডিএনএর অ্যাডভান্স টেকনিক জেনেটিক জিনিওলজি থেকে বাচ্চাটির বিষয়ে জানা যায়। জেনেটিক জিনিওলজির এমন টেকনিক যাতে অনেক গভীর পর্যন্ত খোঁজ মেলে। চার বছরের বাচ্চার নাম জোসেফ অগাস্টাস জেরেল ছিল। তাঁর জন্ম ১৩ জনুয়ারি ১৯৫৩ সালে হয়। পুলিশ জানায় যে বাচ্চাটির কে মারধর করা হয়েছিল. ইনভেস্টিগেশন টিম এটাও জানতে পারে যে বাচ্চাটির মা-বাবা কে? কিন্তু তার পরিচয় সবার সামনে আনা হয়নি। কারণ দুজনেরই মৃত্যু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এটা এখনও জানা যায়নি যে শেষমেষ বাচ্চাটিকে কে মেরেছিল, এর উপর তদন্ত চলছে। এবারে আরও কিছু বছর পরে সেটিও হয়তো পাওয়া যাবে।