ভারতের অন্যতম বড় সাইবার জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁস করল রাজ্য CID। এই চক্র হাজার কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের জালিয়াতিতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ বছরে উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি ও হরিয়ানা পর্যন্ত তাদের কার্যকলাপ ছড়িয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে লাখ-লাখ টাকা কামাত প্রতারকরা।
চক্রের দুই মাস্টারমাইন্ডকে দিল্লি ও হরিয়ানা থেকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানোর পর দু'জনকেই ১২ দিনের সিআইডি হেফাظهতে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, এই চক্র হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফাঁদ ফেলত। তারা এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে গ্রুপ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত মানুষদের টার্গেট করত।
সিআইডি-র এক সূত্র জানিয়েছেন, 'সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের একাধিক গ্রুপে অ্যাড করা হত। সেখানে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অল্প সময়ে প্রচুর টাকা আয়ের লোভ দেখানো হত। একসঙ্গে অনেকজনকেই এভাবে ফাঁদে ফেলা হত। যাঁরা সহজে অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের কৌশল খুঁজছেন, তাঁদেরই এই গ্রুপো ঢোকানো হত।'
রীতিমতো স্ক্রিপ্ট লিখে ঠকানো হত। এই গ্রুপে আগে থেকে নিজেদেরই কিছু লোককে ঢুকিয়ে রাখা হত। তারা অনেক আগে থেকেই এখানে বিনিয়োগ করে টাকা পেয়েছে বলে দেখাত, আর অ্যাডমিনকে ধন্যবাদ জানাত। এসব দেখে যাঁকে ঢোকানো হয়েছে, তিনি বিশ্বাস করে ফেলতেন। এরপরেই লোভের বশে তিনিও মোটা টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়ে যেতেন। বিনিয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা হত।
টাকা পাচার করার জন্য কয়েকটি ভুয়ো কোম্পানি খোলা হয়েছিল। জাল নথি ব্যবহার করে খোলা এই শেল কোম্পানিগুলিতে লুট করা টাকা বিনিয়োগ করা হত।
চন্দননগর সাইবার থানায় ৪৩ লক্ষ টাকার সাইবার জালিয়াতির মামলা থেকেই তদন্তের সূত্রপাত। তদন্তের সময় সাইবার থানা প্রথমে এমনই এক শেল কোম্পানি খুঁজে পায়। সেই কোম্পানির ব্যাঙ্কের ডিটেইলস খতিয়ে দেখতেই চোখ কপালে ওঠে গোয়েন্দাদের। দেখা যায়, সেই অ্যাকাউন্ট দিয়েই কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
এরপরেই সিআইডি এই ভুয়ো কোম্পানির দু'জন ডিরেক্টরকে চিহ্নিত করে। হরিয়ানা থেকে এক মনুষ্য কুমার এবং দিল্লি থেকে সত্যেন্দ্র মহতোকে গ্রেফতার করা হয়। দু'জনকে ট্রানজিট রিমান্ডে দেওয়া হয় এবং পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসা হয়।
সিআইডি-র এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, 'এটি হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি। আমরা এখনও পর্যন্ত যেটুকু পেয়েছি, তা কেবল হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তদন্ত চলছে।'