উত্তর প্রদেশে পুরনো মন্দিরগুলির পুনরুদ্ধার এবং দখলদারিত্বের অভিযোগ ঘিরে ক্রমাগত বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। সম্বল, বারাণসী এবং বুলন্দশহরের পর এবার আমেঠিতেও ১২০ বছরের পুরনো শিব মন্দির নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মুসাফিরখানা থানার আওরঙ্গাবাদ গ্রামের এই মন্দিরটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু লোকের দ্বারা বিগত ২০ বছর ধরে দখল করা হয়েছে এবং পুজো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মন্দিরটির ইতিহাস ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ
গ্রামবাসীদের দাবি, প্রায় ১২০ বছর আগে গ্রামের এক দলিত পরিবার এই পঞ্চশিখর শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। মন্দিরটি এলাকার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু গত দুই দশক ধরে, একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকেরা মন্দিরটি দখল করে পুজো-অর্চনা বন্ধ করে দিয়েছে।
গ্রামবাসীদের এই ক্ষোভের প্রেক্ষিতে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অতুল সিং-এর নেতৃত্বে তারা এসডিএম প্রীতি তিওয়ারিকে একটি লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এসডিএম প্রীতি তিওয়ারি জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত তহসিলদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লে, তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুরনো মন্দিরগুলির পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষাপট
আমেঠির এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর প্রদেশে একাধিক পুরনো মন্দির পুনরুদ্ধার ও দখলদারিত্বের অভিযোগ সামনে এসেছে।
বুলন্দশহরের খুরজা:
সম্প্রতি বুলন্দশহরের খুরজায় ৫০ বছরের পুরনো একটি মন্দিরের সন্ধান মেলে, যা ১৯৯০ সালের দাঙ্গার পর থেকে বন্ধ ছিল। মন্দিরের পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের জন্য স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলি প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
সম্বল:
সম্বলে ১৯৭৮ সালের দাঙ্গার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মন্দির সম্প্রতি প্রশাসন খুলে দিয়েছে এবং সেখানে আবার পুজো শুরু হয়েছে।
বারাণসী:
বারাণসীর মুসলিম অধ্যুষিত মদনপুরা এলাকায় আড়াইশো বছরের পুরনো একটি শিব মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। মন্দিরটি একটি বাড়ির ভিতরে অবস্থিত এবং সেটি এক মুসলিম ব্যক্তির সম্পত্তি বলে দাবি করা হয়েছে।
হিন্দু সংগঠনগুলির দাবী ও বর্তমান পরিস্থিতি
হিন্দু সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে এই ধরনের পুরনো মন্দিরগুলির পুনরুদ্ধার ও সঠিক ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পুজো-অর্চনা শুরু করার দাবি জোরালো হয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসন প্রতিটি মামলায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে।
উত্তর প্রদেশে ক্রমবর্ধমান বিতর্ক
এই ধরনের ঘটনা উত্তর প্রদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। একদিকে, মন্দির পুনরুদ্ধার ও পুজো-অর্চনার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি উঠছে, অন্যদিকে দখলদারিত্ব ও দাঙ্গার পটভূমিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক বাড়ছে।