দিল্লিকাণ্ডের প্রতিবাদে এবার রাজ্যে বড় আন্দোলনের কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজভবন অভিযানের ডাক দিলেন তিনি। অভিষেক জানিয়েছেন, বেলা ৩টের সময় রাজভবন অভিযান করবে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সাক্ষাৎ করার কথা ছিল অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের। জানা গিয়েছে, মন্ত্রী সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন। যদিও তিনি দেখা করেননি। তার পরেই টিএমসি প্রতিনিধিদল ধরনায় বসে পড়ে। মন্ত্রী দেখা না করা পর্যন্ত কৃষি ভবনেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন অভিষেক ও তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে ধরনা বেশিক্ষণ চলেনি। পুলিশ বলপ্রয়োগ করে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের বের করে দেয় এবং আটক করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর ছাড়া পান অভিষেকরা।
পুলিশ লাইন থেকে বেরিয়ে অভিষেক অভিযোগ করেন যে দলের মহিলা সাংসদ-সহ নেতাদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশ দুর্ব্যবহার করেছে। তিনি এটাও দাবি করেন যে তাঁকে চুল ধরে টেনে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, 'আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি অন্ধকার দিন। যারা বাংলার মানুষের জন্য লড়াই করছে, তাদের ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়েছে। মন্ত্রী পালিয়ে যান। আমরা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ নিরাপত্তা কর্মীরা মহিলা-সহ আমাদের সবাইকে মারধর করে। আমাদের যেভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং অপমান করা হয়েছিল, আজকে গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিন চিহ্নিত করা হয়েছে। ছবি মিথ্যা বলে না। আমাদের সাংসদদের যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল তা প্রকাশ্যে এসেছে।
এরপরই অভিষেক দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় 'রাজভবন চলো' মিছিলের ডাক দেন। তিনি বলেন, 'আজকের ঘটনার প্রতিবাদে ৫ অক্টোবর রাজভবন চলো অভিযানের ডাক দিচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে গণতন্ত্র সম্পর্কে যারা বাংলায় সকাল বিকেল জ্ঞান দিচ্ছেন, যেভাবে দিল্লির বুকে গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত হয়েছে, তাতে রাজ্যপালের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকেই চিঠি লেখা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চাইব। যে ৫০ লক্ষ চিঠি দিল্লি নিয়ে এসেছিলাম। সেই সমস্ত চিঠি নিয়ে রাজভবনে যাব। ৫ অক্টোবর ১ লক্ষ লোক নিয়ে বেলা ৩টে নাগাদ রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করব। তাঁর হাতে সমস্ত চিঠি তুলে দেব।' দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করবে শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ আজকের কর্মসূচির পুরোভাগে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবে রাজ্যের শাসক দলের কর্মীরা।
এদিকে, দিল্লির ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিন বলে অভিহিত করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, 'বাংলার জনগণের প্রতি বিজেপির ঘৃণা, দরিদ্রদের অধিকারের প্রতি তাদের অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে তারা নির্মমভাবে বাংলার দরিদ্র মানুষদের জন্য জরুরি তহবিল আটকে রেখেছে এবং যখন আমাদের প্রতিনিধি দল শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে এবং জনগণের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে দিল্লি যায়, তখন তাদের সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়েছে, প্রথমে রাজঘাটে এবং তারপরে কৃষি ভবনে।' মমতা আরও লিখেছেন, 'দিল্লি পুলিশ আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্লজ্জভাবে দুর্ব্যবহার করেছে। তাঁদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সাধারণ অপরাধীদের মতো পুলিশ ভ্যানে রাখা হয়েছিল৷ কারণ তাঁরা ক্ষমতার কাছে সত্যি কথা বলার সাহস করেছিলেন। তাদের ঔদ্ধত্যের সীমা নেই এবং অহংকার ও অহংবোধ তাদের অন্ধ করে দিয়েছে। তারা এখন বাংলার কণ্ঠকে দমন করতে সব সীমা অতিক্রম করেছে।' শেষে তিনি লিখেছেন, 'কিন্তু আমরা ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।'