'অগ্নিবীর'-দের পেনশন-ভাতা নিয়ে বিতর্ক থামার নাম নেই। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে রীতিমতো বাকযুদ্ধ চলছে। বিরোধীদের অভিযোগ, অগ্নিবীরদের সম্পূর্ণ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে অগ্নিবীর অজয় কুমারের আত্মীয়দের কত টাকা দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে বিবৃতিও জারি করেছে কেন্দ্র। কর্তব্যরত একজন অগ্নিবীর জওয়ান কত টাকা ক্ষতিপূরণ পান? অগ্নিবীররা কি সাধারণ সেনা জওয়ানের থেকে কম সুবিধে মেলে? আসুন জানি।
সাধারণ সেনা জওয়ান এবং অগ্নিবীর। দুই সেনার জওয়ানদেরই কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারানো সৈনিকদের A থেকে E পর্যন্ত পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়। অগ্নিবীরকে X, Y এবং Z তে রাখা হয়।
- ক্যাটাগরি A অর্থাৎ সাধারণ জওয়ান এবং ক্যাটাগরি X অর্থাৎ অগ্নিবীররা যদি সামরিক কারণে নয়, অন্য কোনও কারণে হতাহত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁদের এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- B এবং C ক্যাটাগরিতে মিলিটারি সার্ভিসের কারণে মৃত্যু অন্তর্ভুক্ত। অগ্নিবীরের জন্য এই বিভাগটি হল Y।
- সাধারণ সৈন্যদের জন্য, D এবং E ক্যাটাগরি সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শত্রুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, সীমান্তে হিংসাত্মক সংঘর্ষ এবং যুদ্ধের কারণে হতাহত হওয়ার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে। অগ্নিবীরদের ক্ষেত্রে এই ক্যাটাগরি হল জেড।
কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ জওয়ানদের আর্মি গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স ফান্ডে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা দেয়। এছাড়াও, ব্যাঙ্কের তরফে ৫০ লাখ টাকার বীমা পাওয়া যায়। অন্যদিকে অগ্নিবীরের ৪৮ লক্ষ টাকার বীমা রয়েছে। তবে এই সুবিধার জন্য প্রিমিয়াম সরকার দিয়ে করে। অপারেশনের সময় মৃত্যু হলে উভয় পরিবারই এই টাকা পায়। এ জন্য ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রতিরক্ষা বাহিনী। ব্যাঙ্কগুলি সাধারণ সৈন্য এবং অগ্নিবীর দুই শ্রেণীর সেনাকেই বীমা দেয়। ব্যাঙ্ক পলিসি অনুযায়ী বীমার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
যদি কোনও অগ্নিবীর কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান তাহলে সেই জওয়ানের পরিবারকে ৪৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। সেখানে সাধারণ সৈন্যদের জন্য এই এক্স-গ্রেশিয়ার পরিমাণ ২৫ লক্ষ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই টাকার পরিমান নির্ভর করে হতাহতের ধরনের উপর।
আবার অনেক রাজ্য সরকারও দেশের জন্য প্রাণ হারানো বা আহত হওয়া সেনাকে লাখ থেকে এক কোটি পর্যন্ত এক্স-গ্রেশিয়ার দেয়। উভয় সেনার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত অর্থের বিধানও রয়েছে। অপারেশন চলাকালীন মৃত্যুর ক্ষেত্রে অগ্নিবীর এবং সাধারণ জওয়ান দুই শ্রেণীই আলাদাভাবে 8 লক্ষ টাকা পাবেন। অন্য কোনও কারণে মৃত্যু হলে আড়াই লাখ টাকা পায় নিহতের পরিবার।
অগ্নিবীরদের জন্য সেবা নিধি স্কিমও রয়েছে। যাঁদের মৃত্যু সামরিক চাকরির কারণে হয়নি, তাঁদের পরিবার মৃত্যুর তারিখ পর্যন্ত সঞ্চিত অর্থসহ সরকারি অনুদান ও সুদ পাবে। যেখানে অপারেশন বা ডিউটি চলাকালীন যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের পরিবার অগ্নিবীরের পুরো মেয়াদের অর্থাৎ চার বছরের বেতন এবং পরিষেবা তহবিল পাবেন।
সাধারণ সৈনিকদের আবার গ্র্যাচুইটি এবং মাসিক ফ্যামিলি পেনশন রয়েছে। যেসব জওয়ান সামরিক কারণে মারা যাননি তাঁদের স্বজনরাও দশ বছর ধরে শেষ বেতনের ৫০ শতাংশ পেয়ে থাকেন। এরপর তা ৩০ শতাংশে নেমে আসে। সামরিক পরিষেবা বা তার সঙ্গে যুক্ত যে কোনও কারণে হতাহতের ক্ষেত্রে, বিশেষ পারিবারিক পেনশন প্রযোজ্য। মাসিক পেনশন সেক্ষেত্রে মিলবে শেষ বেতনের ৬০ শতাংশ। অপারেশন চলাকালীন মৃত্যু হলে শেষ বেতনের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ পুরো বেতন পেনশন হিসেবে দেওয়া হয়। এটি করমুক্ত। আবার পেনশনের সঙ্গে ডিএ-ও যোগ করা হয়।
সেনা জওয়ানের সন্তানরাও ভাতা পায়। কর্তব্যরত অবস্থায় একজন সৈনিক শহিদ হলে তাঁর সন্তান শিক্ষা ভাতা পায়। ফি এবং বইয়ের মূল্য দেওয়া হয়। সেই গ্র্যাজুয়েশন না করা পর্যন্ত এই ভাতা মিলবে। ভাতার মধ্যে স্কুল বা কলেজ যাওয়া আসা, হস্টেলে যাতায়াতের খরচ ও পোশাকের টাকাও দেওয়া হয়।
সেনা জওয়ানদের সন্তানরা প্রাথমিক থেকে পেশাদার কোর্সের জন্য প্রতি বছর ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পায়। সৈন্যদের স্ত্রীরাও স্নাতক এবং যে কোনও পেশাগত কোর্সের জন্য প্রতি বছর ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পেতে পারেন।
আবার সেই পরিবার এক্স-সার্ভিসম্যান কন্ট্রিবিউটরি হেলথ স্কিম (ECHS) এর সুবিধাও পায়। সরকার ছাড়াও, প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলিও রয়েছে, যেখানে উন্নত চিকিৎসা পেতে পারেন।
অগ্নিবীর স্কিম কী? সরকার ২০২২ সালের জুন মাসে অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে আসে। তরুণদের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার এই স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীতে যোগ দিতে পারেন যুবকপা। এতে প্রাথমিকভাবে জওয়ানদের চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের পরবর্তী চার বছরের জন্যও মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে। চাকরি শেষ হলে, অগ্নিবীরদের ২৫ শতাংশকে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে। বাকি ৭৫ শতাংশকে শংসাপত্র দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ পান।