উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা ঘিরে হিংসা। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাহরাইচের ওই গ্রাম। এবার সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হল। দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রার ছো়ড়া গুলিতে নিহত হন রাম গোপাল মিশ্র। তাঁর দেহ রাস্তায় রেখে এলাকার মানুষ তাণ্ডব চালায়। দোকানপাট, শোরুম, বাড়িঘর ও হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে লখনউতে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হয়।
সূত্রের খবর সেই বৈঠকে যোগী আধিকারিকদের দাঙ্গাকারীদের উপর জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলার পরামর্শ দেন। পুলিশ কর্তাদের তাঁর নির্দেশ, যারা গণ্ডগোল নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। গতরাতেই যোগী আদিত্যনাথ ঘটনা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে।
যোগীর বৈঠকের আগে থেকেই বাহরাইচে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জায়গায় জায়গায় বসানো হয় পুলিশ পিকেট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ কোম্পানি পিএসি পাঠানো হয়। এসটিএফও নামানো হয়। এক পুলিশ আধিকারিককে বন্দুক হাতে বাহরাইচের রাস্তায় দুর্বৃত্তদের তাড়া করতেও দেখা যায়। সেই ভিডিও এবং ছবি এখন ভাইরাল।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। পুলিশ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। উদ্ধারকার্যও শুরু হয়েছে। জেলার ডিএম ও এসপিও ঘটনাস্থলে রয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনীকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাহরাইচে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে গুজব না ছড়ায়।
১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাহরাইচের মহসি তহসিলের হারদি থানা এলাকার মহারাজগঞ্জ শহরে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য শোভাযাত্রা বের হয়। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল এই যাত্রা। সেই সময় ডিজে বাজানোকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এসময় কয়েকজন ছাদ থেকে পাথর ছুড়তে থাকে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করলে তারা গুলি চালায়। তাতে রাম গোপাল মিশ্র নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন।
এই সংঘর্ষে প্রায় ১৫ জন জখম হন। রাম গোপালের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। দোকানপাট, শোরুম ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়।
এদিকে যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মহসি থানায় এই এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আব্দুল হামিদ, সরফরাজ, ফাহিম, সাহির খান, নানকাউ ও মারফ আলিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই ছয়জনের নাম ছাড়া বাকি চারজন অজ্ঞাত। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।