বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে দিল্লিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ চলছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে তুমুল স্লোগানে এই বিক্ষোভ চলছে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এখানে এসেছেন। তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সাধু-সন্ত ও মহিলারাও রয়েছেন। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধের দাবি উঠেছে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা বেড়েছে। গত মাসে হিন্দু ধর্মীয় গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর এসব হামলা আরও বেড়ে যায়।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে হিন্দু সংগঠনের বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়েছেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং যারা তা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই লোকেরা। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে এই বিক্ষোভ চলছে। এতে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছে, যারা বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের ডাকে এসেছেন। এ সময় জনতা হিন্দু হত্যা বন্ধ ও ইসকনের সাধুদের মুক্তির মতো স্লোগান দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রসংঘ হায় হায় স্লোগানও দেওয়া হয়। এই আন্দোলনকারীরা বলেন, রাষ্ট্রসংঘ অনেক বিষয়ে কথা বলে, কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হিংসা নিয়ে কিছু বলে না।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠনও হিন্দুদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলছে না। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা কোনও একটি সংগঠনের ডাকে জড়ো হননি, এসেছেন বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের পক্ষে। এ ছাড়া সুশীল সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছেন। এর আগে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছিল এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হিংসা নিয়ে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকায় রয়েছেন। মাত্র একদিন আগেই হিন্দুদের ওপর নৃশংসতার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি। বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হুসেনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। হুসেনের সঙ্গে দেখা করার পর বিদেশ সচিব মিশ্রি বলেন, '... আমরা সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছি এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি... আমরা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর হামলার দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি .
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে বিদেশ সচিবের মন্তব্যের পর বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের একটি বক্তব্য সামনে এসেছে। তিনি বলেছেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা এড়ানো।
এর আগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রক তার বিবৃতিতে বলেছিল, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের পাশাপাশি মন্দিরের অপবিত্রতার অনেকগুলি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনার অপরাধীরা এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে যারা শান্তিপূর্ণভাবে বৈধ দাবি করেছেন।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের কী অবস্থা?
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রসঙ্গত, দুই বছর আগেও বাংলাদেশে হিন্দুবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছিল, তারপরে বহু হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল। সম্প্রতি শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর শতাধিক জায়গা থেকে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। ইসকন মন্দির ও দুর্গা মন্দিরকে টার্গেট করা হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাট। দিনাজপুরে একটি শ্মশানও দখল করেছে দুর্বৃত্তরা।
এখন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে, তবে তারা কয়েক দশক ধরে সেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছে। হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন দাবি করেছে যে ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এক কোটির বেশি হিন্দু বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। ফাউন্ডেশন বলছে, প্রতি বছর ২ লাখ ৩০ হাজার হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে অমুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ১৯৫১ সালে, বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) অমুসলিম জনসংখ্যা ছিল ২৩.২%। এখানে সর্বশেষ জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। বাংলাদেশে অমুসলিম জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৪%।