বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিশেষত সেদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন জয়শঙ্কর।
জয়শঙ্কর ২৪-২৬ নভেম্বর ইতালিতে অনুষ্ঠিত G7 বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগদান শেষে দেশে ফিরে আসেন। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়। ইতালিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ফলাফলও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রায় ২০০টি হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের, যারা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকায় হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়, যা নিয়ে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও সহিংস প্রতিবাদ হয়। চিন্ময়ের জামিন নাকচ হলে পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে।
চট্টগ্রামের একটি আদালতের বাইরে বিক্ষোভ চলাকালে হিংসার সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হন। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের অন্তত ৩০ জন সদস্যকে ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ইসকনকে “ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন” আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের এই বৈঠক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এই ধরনের হিংসার প্রতি ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা স্বাভাবিক। তবে ইসকন সংক্রান্ত বিতর্ক এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।