সিজেআই ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ১০ নভেম্বর, ২০২৪-এ অবসর নিতে চলেছেন। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মাত্র কয়েকটি কার্যদিবস বাকি থাকায়, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণা করার দায়িত্ব তাঁর উপর। আগামী ৮ নভেম্বর তাঁর শেষ কার্যদিবস, এবং এর আগে তিনি কয়েকটি সাংবিধানিক বেঞ্চের মামলায় রায় দেবেন, যার মধ্যে অনেকগুলোর আদেশ ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং তাঁর অবসরের আগে কোন কোন সিদ্ধান্তগুলিতে নজর রাখা প্রয়োজন।
১. এএমইউ-এর সংখ্যালঘু মর্যাদা
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) সংখ্যালঘু মর্যাদা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির বেঞ্চের একটি সিদ্ধান্ত রায় ঘোষণা করতে বাকি রয়েছে। ভারতের সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদের অধীনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার নিয়ে এই রায় সংরক্ষিত রয়েছে। এই মামলার ফলাফল সংবিধানের সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২. নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম সংশোধন
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম সংশোধন সংক্রান্ত একটি রায় ঘোষণা করতে চলেছে। রাজস্থান হাইকোর্টের একটি মামলায় ২০১৩ সালে অনুবাদক পদে নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা প্রার্থীদের পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছিল। এই রায় সরকারি চাকরি প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. আসাম NRC বৈধতা
আসাম NRC নিয়ে নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬এ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি পিটিশনের উপর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবে। আসামে ১৯৬৬ সালের আগে আগত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং পরবর্তী দশকের জন্য ভোটাধিকার না দেওয়া নিয়ে আইনটি সংবিধানসম্মত কি না, তা এই রায়ে নির্ধারণ করা হবে।
৪. শিল্প মদ নিয়ন্ত্রণ
কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির ক্ষমতার বিভাজন নিয়ে শিল্প মদ নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার কার তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির বেঞ্চ একটি রায় দিতে চলেছে। এই রায় কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির রাজস্বের একটি বড় উৎসকে প্রভাবিত করবে।
৫. সম্পত্তি পুনর্বন্টন ক্ষমতা
ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও পুনর্বন্টন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির বেঞ্চ একটি রায় ঘোষণা করবে। সংবিধানের ৩৯(বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্পত্তির বন্টন সাধারণ মানুষের স্বার্থে করা উচিত কি না, এই রায় তা নির্ধারণ করবে।
৬. BYJUS সংক্রান্ত মামলা
BYJUS এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেউলিয়াত্ব সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন ঋণদাতা GLAS ট্রাস্ট কোম্পানির করা মামলায় ভারতীয় কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৭. আরজি কর হাসপাতাল মামলা
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ডাক্তার এবং প্যারা মেডিকেল কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় টাস্ক ফোর্সের দেওয়া পরামর্শ সংক্রান্ত একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সিজেআই চন্দ্রচূড় নিজেই এই মামলাটি গ্রহণ করেছেন।
এই মামলাগুলোর রায় শুধুমাত্র ভারতীয় বিচারব্যবস্থার জন্যই নয়, সামগ্রিক সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মেয়াদ শেষের আগে এসব রায় ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।