মঙ্গলবার দিল্লিতে INDIA জোটের চতুর্থ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্ডিয়া ব্লকের চতুর্থ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসেনি। দিল্লির অশোকা হোটেলে বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির না থেকেই বেরিয়ে যান মমতা-অভিষেক। সূত্রের খবর, জোটের এই চতুর্থ বৈঠক চলাকালীন দলিত সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে "ইন্ডিয়া" জোটের প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ করার প্রস্তাব করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা সমর্থন করেন আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর বুধবার রাজধানীর বুকে বাংলার জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে দেখা করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের বকেয়া ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আজ বৈঠকের কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অভিষেককে সঙ্গে নিয়েই রবিবারই দিল্লি রওনা দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কেন্দ্র হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলেই এরাজ্যে উন্নয়নের বহু কাজ আটকে রয়েছে। টাকার অভাবে সেই কাজ করা যাচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসকদলের নেতারা। এর আগেও বকেয়া আদায়ে দিল্লির দরবারে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। তবে এরপরেও টাকা মেলেনি। এবার তাই ফের একবার বকেয়া ইস্যুতে রাজধানীতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তৃণমূলের ১০ জন সাংসদকে নিয়ে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। একশো দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা-সহ এরাজ্যের একাধিক খাতে বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় টাকা বকেয়া রয়েছে। যার জেরে উন্নয়নের একগুচ্ছ কাজ থমকে রয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের একাধিক খাতে বঞ্চনার অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে এদিন তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবে রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদদের একটি দল।
আরও পড়ুন
বাংলার জন্য ঠিক কী কী দাবি করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
- নবান্ন সূত্রে আরও খবর, প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে বঞ্চনার মূল অভিযোগ তুলে ধরা হবে৷ ১০০ দিনের গ্রামীণ প্রকল্পের কাজের টাকা এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার টাকার বকেয়া ইস্যুকে তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্যের তৃণমূল সাংসদরা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ১০০ দিনের গ্রামীণ প্রকল্পের কাজের টাকা আটকে রাখার দরুণ কেন্দ্রের থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলেই রাজ্যের দাবি। যার মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা ১০০ দিনের গ্রামীণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মজুরি এবং সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন নির্মীয়মান সামগ্রীর জন্য কেন্দ্রের থেকে বকেয়া রয়েছে। এই ১০০ দিনের গ্রামীণ প্রকল্পের কাজের টাকা নিয়েই গত কয়েক মাস যাবত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সরব হয়েছেন।
- পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনাতেও কেন্দ্রের থেকে ৮২০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলেও দাবি রাজ্যের। গ্রামীণ আবাস যোজনার অধীনে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিলেও কেন্দ্র তারপর টাকা আটকে রেখে দেয় বলে অভিযোগ রাজ্যের।
- সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার অধীনেও রাস্তা তৈরীর বরাদ্দের কথা বললেও পরে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ৭৬০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার অধীনে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে শুধুমাত্র ১৩ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দিয়েছে এখনও পর্যন্ত। এর জোরে বাকি রাস্তা নির্মাণের কাজও এখনও রাজ্য করতে পারিনি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
- বিভিন্ন পেনশন প্রকল্পে রাজ্যের ২০৫ কোটি টাকা এখনও কেন্দ্র দেয়নি বলে অভিযোগ মমতা সরকারের। বুধবারে বৈঠকে এই বিষয়গুলি তোলার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময় স্বাস্থ্য খাতেও কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি নির্দিষ্ট রং সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ব্যবহার করার কথা বলা হলেও রাজ্য তাদের নির্দিষ্ট করা রং ব্যবহার করেছে। এর কারণে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে টাকাও কেন্দ্র আটকে রেখেছে।
- পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য টাকাও আজ পর্যন্ত রাজ্য পায়নি। বিশেষত, আমফানের সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সব টাকা এখনও কেন্দ্র দেয়নি রাজ্যকে৷ সেই অভিযোগও বুধবারের বৈঠকে তুলে ধরা হতে। পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে টাকা না দেওয়া, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সহ একাধিক প্রসঙ্গ বুধবারে বৈঠকে লিখিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।