আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপিকে রুখতে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তখন অ-বিজেপি দলগুলিকে এক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে। বিরোধী ঐক্যের চেষ্টা নিয়ে বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করে বলছেন, এখানে তো সবাই বর, বরযাত্রী কেউ নেই। বিরোধীরা জানাক, তাদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ কে?
গত ২৩ জুন বিহারের রাজধানী পটনায় বিরোধীদের বৈঠক শেষের পর সাংবাদিক সম্মেললে লালুপ্রসাদ যাদব রাহুল গান্ধীর বিয়ে নিয়ে জানতে চান। তিনি রাহুলকে পরামর্শ দেন, আপনি বউ খুঁজুন। আমরা বরযাত্রী হতে রাজি। যে মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তারিক আনোয়ার রাজনৈতিক অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়,'বর মানে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন রাহুল গান্ধীই। লালুর বক্তব্যের অর্থ ছিল রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সব বিরোধী দল নির্বাচনে লড়বে।'
যে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নাম ঘোষণা এড়িয়ে চলছিল, তারাই লোকসভা ভোটের আগে রাহুলকে মুখ করে নতুন কৌশল নিয়েছে? এই বিষয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র অখিলেশ প্রতাপ সিং বলেছেন,'দলের কৌশলে কোনও পরিবর্তন হয়নি। সবাই জানে রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের মুখ।' নীতীশ কুমার ও ফারুক আবদুল্লাহর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,'প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত রয়েছে। সবাই নিজেদের মত দিচ্ছেন। কিন্তু মাটিতে কে সবচেয়ে বেশি লড়াই করছে? এটাও সবার জানা।'
বর-বরযাত্রী নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে, বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কৌশল নিয়ে মোদীকে মাত দিতে চলেছে কংগ্রেস? ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ১৯৯৯ লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়কাল ছিল। কোনও দলই সুস্পষ্ট জনাদেশ পাচ্ছিল না। গঠন করা হচ্ছিল জোট সরকার। স্থিতিশীলতার অভাবে কম সময়ের ব্যবধানে একাধিক প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছে দেশ। ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেস সরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও। বিরোধী দল ছিল বিজেপি।
নির্বাচনের আগে বিজেপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়েছিল। দলের সভাপতি পদে মুরলী মনোহর যোশীর স্থলাভিষিক্ত হন এলকে আডবানি। যিনি রাম মন্দির আন্দোলনের পরে দলের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। সভাপতি হওয়ার পর লালকৃষ্ণ আডবানি ঘোষণা করেছিলেন,' আগামী সরকার..'। তখন বিজেপি কর্মী ও নেতারাও ভেবেছিলেন যে তিনিই দলের মুখ। তিনি সভাপতি। তাহলে নির্বাচনে জয় এলে তিনিই হবেন প্রধামন্ত্রী। তবে ওই মঞ্চ থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে মুখ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন আডবানি।
স্বাধীনতার পর সেই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করে ভোটে লড়েছিল বিরোধীরা। নির্বাচনের পরে বিজেপি ১৬১টি আসন জিতে একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হন। এই সরকার মাত্র ১৩ দিন চলেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার প্রধানমন্ত্রীর মুখকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি স্টাইলে নির্বাচনের মাঠে নামার একটি নতুন রাজনৈতিক কৌশলের সূচনা করেছিল। যা তাদের মাইলেজ দিয়েছিল।
বিরোধী দল কতবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ ঠিক করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে?
স্বাধীনতার পরের প্রথম দিকে কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল। জরুরি অবস্থার পরে দেশে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে প্রথম অ-কংগ্রেস সরকার গঠিত হয়েছিল। এরপর জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগে জনতা পার্টি গঠিত হয়। জনতা পার্টিও নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনেও কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে মুখ করা হয়নি। এরপর জনতা দল বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে ১৯৮৯ সালে ভিপি সিংয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। তার পরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনও মুখ সামনে রাখা হয়নি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অটলকে মুখ হিসাবে ঘোষণা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি। তারাই হয়েছিল একক বৃহত্তম দল। বিজেপি সরকারও গঠন করে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার রীতিও শুরু হয়। এর পরে ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ নির্বাচনেও অটলবিহারী বাজপেয়ী ছিলেন এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। ১৯৯৮ সাল বাদে ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে বিজেপি শাসক দল হিসাবে মাঠে নেমেছিল। ২০০৪ সালে ছোট দলগুলিকে নিয়ে কংগ্রেস ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) গঠন করে।
এনডিএকে হারিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিরোধী ইউপিএ। সেবার বিরোধীরা অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করেনি। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোট এলকে আডবানিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেছিল। নির্বাচনের ফল ইউপিএ-র পক্ষে যায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এনডিএ গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করে। ৩৩৬টি আসন জিতেছিল তারা। বিজেপি একাই ২৮২টি আসন জেতে। যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭৩টি আসনের চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৯ সালে ২০১৪ সালের ফলকেও ছাপিয়ে যায় এনডিএ। ২০১৯ সালে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন জিতেছিল। এনডিএ-র ঝুলিতে গিয়েছিল ৩৫১টি আসন।
কংগ্রেসের পরিবর্তিত রণনীতির পিছনে কারণ কী?
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলি। নীতীশ কুমার বিরোধী ঐক্য মজবুত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছেন। তিনিই সলতে পাকাচ্ছেন। সেই নীতীশ প্রধানমন্ত্রীর মুখ হতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, এতে বিরোধী ঐক্যের ক্ষতি হবে। এনসিপি প্রধান ফারুক আবদুল্লাহর মতে, এখন সবার একজোট হওয়ার দরকার। বাকি সমস্যাগুলির পরে সমাধান করা হবে। কংগ্রেসের তরফে রাহুল গান্ধীর মুখ সামনে রাখার পিছনে কৌশল কী? ভারত জোড়ো যাত্রার পর রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তি বদলে গিয়েছে বলে দাবি কংগ্রেসের। কর্ণাটকে জয়ের পর কংগ্রেসের মনোবলও বেড়েছে। সে কারণেই কংগ্রেস রাহুলকে মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এই প্রতিবেদনটি হিন্দিতে পড়তে ক্লিক করুন এখানে - राहुल का चेहरा, विपक्षी गठबंधन की गोटी... 2024 चुनाव के लिए कांग्रेस का 'अटल फॉर्मूला'!