লোকসভায় বাজেট নিয়ে জবাবি ভাষণ দিচ্ছেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর ভাষণের সময় সংসদে তুমুল হট্টগোল! প্রথমে মহাভারতের 'চক্রব্যূহ' টেনে আক্রমণ শানালেন। তারপর আদানি-আম্বানির নাম ঘিরে চলল তীব্র বাদানুবাদ। স্পিকার ওম বিড়লার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস সাংসদরা।
- স্পিকার বলেন, আপনি সংসদের নিয়মগুলি খুঁটিয়ে পড়ুন। আপনার সুবিধে হবে। সংসদের কোনও ব্যবস্থা নিয়ে আপনার আপত্তি থাকলে ব্যক্তিগতভাবে আমার ঘরে এসে বলুন। কিন্তু প্রকাশ্যে সংসদের ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।
- প্রতিরক্ষামন্ত্রী বললেন, আমি অগ্নিবীরের প্রসঙ্গ তুলেছি। উনি আগেই বলেছিলেন, শহিদ অগ্নিবীরদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। ওরা ক্ষতিপূরণ পায়নি, বিমাকৃত টাকা পেয়েছিল।
- রাজনাথ সিং উঠে বললেন, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তার জবাব দেবেন অর্থমন্ত্রী। আর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আমি জবাব দিতে তৈরি।
- চক্রব্যূহের ছোট ছোট ব্যবস্থা যে তৈরি করেছেন দেশজুড়ে, সেটা ভেঙে দেবে জাতিগত জনগণনা।
- চক্রব্যূহের কারণে কোটি কোটি মানুষ সমস্যায়। আমরা এটা ভেঙে দেব। আর সেটা ভাঙব জাতিগত জনগণনা দিয়ে। আমরা এই সংসদে জাতিগত জনগণনা পাশ করেই দেখাব।
- আপনারা হিন্দু ধর্মের কিছুই বোঝেন না। আসলে আপনারা চক্রব্যূহ তৈরি করতে চান। শিবের বরযাত্রী হয়েছিলেন ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ। সব ধর্মেই চক্রব্যূহ ভাঙার কথা রয়েছে। গির্জা বা মসজিদে সকলে যেতে পারেন।
- চক্রব্যূহ বা পদ্মব্যূহ তৈরির লোকেরা ভাবে, দেশের জনতা অভিমূন্য। আসলে অভিমূন্য নন, অর্জুন। প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট।
- বাজেটে জাতিগত জনগণনা চায় পুরো দেশ। পিছড়ে বর্গ, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা চায় জাতিগত জনগণনা। সকলেই জানতে চান, তাঁদের অংশীদারিত্ব কত? হালুয় পায় খালি ২-৩ শতাংশ লোক। অর্থমন্ত্রী হাসছেন। এটা হাসার বিষয় নয়। জাতিগত জনগণনা হলে দেশ বদলে যাবে।
- বাজেটের আগে হালুয়া তৈরি হচ্ছে। অথচ সেখানে কোনও ওবিসি ও প্রান্তিক অফিসার নেই। এটা কী হচ্ছে? দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।
- স্পিকার জানান, ছবি দেখানো যাবে না। এটা নিয়ম বহির্ভূত।
- লোকসভার টিভি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করলেন রাহুল গান্ধী। সংসদে ছবি দেখানোর চেষ্টা করলেন।
- দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ পিছড়ে বর্গ, আদিবাসী ও দলিত। তাঁরা কোথাও জায়গা পান না। তাঁরা ব্যবসা, সরকারে এমনকি কর্পোরেটেও জায়গা পান না।
- 'আমি বুঝি, এওয়ান আর এটু-কে বাঁচাতে হবে। এটাই মন্ত্রীর দায়িত্ব'। কিরেন রিজিজুকে আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধী।
-এই দুজন ভারতের পরিকাঠামো ও ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করে। টেলিকম, বিমানবন্দর রয়েছে এদের হাতে। এবার রেলেও বিনিয়োগ করতে চলেছে। এদের কাছে ভারতের পুরো সম্পদের একচেটিয়া কারবার। এদের ব্যাপারে কীভাবে বলব, সেটা বুঝতে পারছি না। এদের ব্যাপারে আমি বলবই। আর যদি চান, নাম না করি, তাহলে অন্য কোনও বিকল্প দিন।
- ডেপুটি বিরোধী দলনেতা গৌরব গগৈ উঠে বলেন, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পপতিদের তুলনা করতে পারেন না। রাহুল গান্ধী জানান, আমি এওয়ান এবং এটু বলতে পারি? ওম বিড়লা জানান,'আপনি বিরোধী দলনেতা, নিজের দায়িত্ব পালন করুন'।
- রাহুল গান্ধীকে বাধা দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন, আপনার ডেপুটি বলে গিয়েছেন, যাঁরা সংসদের সদস্য নন, তাঁদের নাম নেওয়া যাবে না।
- মধ্যবিত্তদের ছাতিতে শেল মেরেছেন। ভালো হয়েছে, মধ্যবিত্তরা ধীরে ধীরে ইন্ডিয়া জোটের দিকে আসছেন। আপনারা যেখানে পারেন সেখানেই চক্রব্যূহ তৈরি করেন। আমরা চক্রব্যূহ ভাঙার কাজ করি। আপনারা চান, ভারতের গরিবরা যেন স্বপ্ন দেখতে না পারেন। আম্বানি, আদানি...
- আমরা সরকারে আসলে আইনিভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করব।
- রাহুলকে ভাষণে বাধা দেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন,'অসত্য বলবেন না'। রাহুল জানান, সংসদের নিয়ম সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না।
- আইনিভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চান কৃষকরা। তাঁদের সেটা এখনও দেওয়া হয়নি। আমার সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
- বাজেটে অগ্নিবীরদের জন্য কোনও বরাদ্দ নেই। যুবকদের অগ্নিবীরের চক্রব্যূহ তৈরি করেছেন।
- এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু প্রশ্নপত্র ফাঁস। একদিকে বেকারত্ব, আর একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে আটকে গিয়েছে যুবকরা। গত ১০ বছরে ৭০বার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। বাজেটে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একটাও কথা বললেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। গত ২০ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে কম বরাদ্দ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
- ইন্টার্নশিপের যে প্রস্তাব বাজেটে রয়েছে, তাতে ৯০ শতাংশ যুবকের কোনও লাভ নেই।
- ট্যাক্স টেরোরিজমের শিকার হচ্ছে ছোট ব্যবসাগুলি। তার প্রতিকার নেই বাজেটে। কোভিডের সময় ছোট শিল্পগুলিকে আপনারা খতম করেছেন। তাই যুবকরা রোজগার পাচ্ছে না।
- চক্রব্যূহে ফেঁসে গিয়েছে ভারত, যার প্রতীক পদ্ম ছাতিতে নিয়ে ঘোরেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
- মহাভারতে চক্রব্যূহ তৈরি করে অভিমূন্যকে মারা হয়েছিল। চক্রব্যূহের আর এক অর্থ হল পদ্মব্যূহ। মহাভারতের সময় ৬ জন চক্রব্যূহ তৈরি করেছিল। এই একবিংশ শতকেও চক্রব্যূহ তৈরি করেছে কেন্দ্রের শাসক দল।
- গোটা দেশে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরাও ভয়ে ভয়ে থাকেন।
- ঘৃণা, হিংসা চায় না দেশ। পদ্মের লোকেরা দেশের মনই পড়তে পারেনি।