আজ দেশের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সংসদ ভবন সহ সারা দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সকাল ১০ টা থেকে। শেষ হবে বিকাল ৫ টায়। ২১ জুলাই ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার কথা। রাষ্ট্রপতি পদের দৌড়ে রয়েছেন বিজেপি তথা এনডিএ-র প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হলেন যশবন্ত সিনহা। রাইসিনা হিলস-এর দখল কার হাতে আসবে, তা স্থির হবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধায়ক এবং সাংসদদের সম্মিলিত ভোটে। এনডিএ-র দ্রৌপদী মুর্মু নাকি বিরোধী পক্ষের যশবন্ত সিনহা, কে হাসবেন শেষ হাসি? তা জানতে অবশ্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দেশের সাংসদ ও বিধায়ক মিলিয়ে মোট ৪৮০০ জন ভোটদানের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রপতি বেছে নেবেন। কিন্তু কীভাবে হই দেশের সাংবিধানিক প্রধানের নির্বাচন? চলুন জেনে নেওয়া যাক গোটা প্রক্রিয়া।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পদ্ধতি
ভারতের সংবিধানের ৫৪ ও ৫৫ ধারায় পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় । গণপরিষদে অনেকেই প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু সরাসরি জনগণের কাছে রাষ্ট্রের প্রধানকে ভোট প্রার্থী প্রতিপন্ন করার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত বা সম্মানজনক বলে সমীচীন হয়নি । রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীকে-
১.ভারতীয় নাগরিক হতে হবে
২. ন্যূনতম ৩৫ বছর বয়স হতে হবে
৩. লোকসভার সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে
বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন পত্রের প্রস্তাব ও সমর্থকের সংখ্যা উভয় ক্ষেত্রেই ৫০ । সংবিধানের ৫৪ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি একটি বিশেষ নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচিত হন । কেন্দ্রীয় সংসদের উভয় কক্ষের ( রাজ্যসভা ও লোকসভা ) নির্বাচিত সদস্যদের ও অঙ্গ রাজ্যগুলির বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয় । রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে গেলে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই হবে না, প্রদত্ত ভোটের অর্ধেকের বেশি ভোট পেলেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়া যাবে । যে পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন হয়, তার সাংবিধানিক নাম হল 'একক হস্তান্তরযোগ্য জোটের মাধ্যমে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' (Proportional Representation by means of single transferable vote)। বিশেষ পদ্ধতিতে সংসদ ও বিধানসভার সদস্যদের ভোটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় । প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের একটি করে ভোট থাকে । কিন্তু এই ভোটের মূল্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন মানের হয় । কারণ,বিভিন্ন রাজ্যের জনসংখ্যা ও বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা এক নয় ।
সর্বশেষ জনগণনার ভিত্তিতে রাজ্যের জনসংখ্যাকে বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয় । সেই ভাগফলকে আবার ১০০০ দিয়ে ভাগ করা হয় । এই ভাগফলের সংখ্যাই হবে সেই রাজ্যের বিধানসভার প্রত্যেক সদস্যের মূল্য । কিন্তু ভাগশেষ যদি ৫০০ বা তার বেশি থাকে তবে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে প্রত্যেক সদস্যের ভোট সংখ্যা ১ বাড়াতে হবে । এরপর কেন্দ্রীয় সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটসংখ্যা নির্ধারিত হয় ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের মূল্য প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে প্রতি বিধায়কের ভোটের মূল্য সবচেয়ে বেশি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে — ২০৮ । এর সবচেয়ে কম মূল্য হচ্ছে সিকিম রাজ্যে —মাত্র ৭ । পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বিধায়কের ভোটের মূল্য ১৫১ । পশ্চিমবঙ্গে বিধায়ক সংখ্যা ২৯৪ ও এই হিসাবে রাজ্যের মোট ভোটের মূল্য ৪৪৩৯৪।
একনজরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের খুঁটিনাটি
মোট ভোটার: ৪ হাজার ৮০৯ জন
রাজ্যসভার সাংসদ: ২৩৩ জন
লোকসভার সাংসদ: ৫৪৩ জন
মোট বিধায়ক: ৪ হাজার ৩৩ জন
মোট ভোটমূল্য: ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৩১
বিধায়কদের ভোটের মোট মূল্য: ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৩১
সাংসদদের ভোটের মোট মূল্য: ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ২০০
সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে রাষ্ট্রপতি সর্ব রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন । তাই রাষ্ট্রপতি সরাসরি অন্যান্য জন প্রতিনিধিদের মতো নির্বাচিত হন না । নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাঁর সর্বরাজ্য পরিচয়ই প্রধান ।