চাঞ্চল্যকর খবর উত্তরপ্রদেশের কানপুর গ্রাম থেকে। যেখানে পোষা বেড়ালের কামড়ে এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে বাবা-ছেলের। বলা হচ্ছে, কিছু দিন আগে বেড়ালটিকে একটি রাস্তার কুকুর কামড়েছিল, যার কারণে তার শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বেড়ালটি বাবা-ছেলেকে কামড় দিলে তারা তা হালকাভাবে নেন এবং জলাতঙ্কের ইনজেকশন নেননি। কিছুদিন পর তাঁদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। জানা যাক, গোটা ঘটনাটি আকবরপুর কোতোয়ালি এলাকার অশোক নগরের।
এখানকার বাসিন্দা ইমতিয়াজউদ্দিন নবৌলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। বাড়িতে একটি বিড়াল পুষেছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে এই বিড়ালটিকে একটি রাস্তার কুকুর কামড়ায়। এরপর ইমতিয়াজউদ্দিন পোষা বিড়ালটিকে ডাক্তারকে দেখান। তার চিকিৎসা চলছিল।
এদিকে গত অক্টোবরে বিড়ালটি ইমতিয়াজউদ্দিনের স্ত্রীকে নখর দিয়ে কামড়ে আহত করে। তবে তিনি গুরুতর আহত হননি। এরপর অক্টোবরের শেষ দিকে বিড়ালটি ইমতিয়াজের ছেলে আজিমকে কামড় দেয়। ২ ঘণ্টা পর ইমতিয়াজউদ্দিনকেও বিড়াল কামড়ায়। কিন্তু তখন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি এবং নিজেরা চিকিৎসাও করেননি।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিড়ালটি মারা যায়। এরপর ২০ নভেম্বর আজিমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁর মধ্যে জলাতঙ্কের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে একজন প্রাইভেট চিকিৎসকের পরামর্শ নেন এবং টিটেনাস ইনজেকশন পান। ২৪ নভেম্বর পুরো পরিবার ভোপালে আত্মীয়ের বাড়িতে একটি বিয়েতে যোগ দিতে গিয়েছিল। ২৫ নভেম্বর সেখানে বিয়েতে অংশ নেয় পরিবার। আজিমের স্বাস্থ্যের আবারও অবনতি শুরু হলে মাত্র ২ ঘণ্টা তাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে বেসরকারি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু তাঁর অবস্থা উন্নতির পরিবর্তে আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। নাজিমকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা যখন কানপুরে আসছিলেন পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর পুরো পরিবার শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু কিছুদিন পর (২৯ নভেম্বর) ইমতিয়াজউদ্দিনের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কানপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরিবার তাঁকে পিজিআইতে নিয়ে যায়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমতিয়াজউদ্দিনেরও মৃত্যু হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ইমতিয়াজউদ্দিনের স্ত্রী সংক্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, স্বামীর সুগার ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল। তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তবে ইমতিয়াজউদ্দিনের প্রতিবেশীরা বলছেন, বাবা ও ছেলের মধ্যে জলাতঙ্কের লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। যার কারণে তাঁরা প্রাণ হারান।
এই পুরো ঘটনায় ভেটেরিনারি অফিসার সুবোধ বলেন, বাবা ও ছেলের উল্লেখিত লক্ষণগুলো শুধু জলাতঙ্কের। জলাতঙ্ক সংক্রমণ বিপজ্জনক। কেউ যদি তাঁর বাড়িতে পোষা কুকুর বা বিড়াল রাখেন, তাহলে তাঁকে জলাতঙ্কের ইনজেকশন দিতে হবে, যাতে পরিবারের সদস্য ও শিশুদের কোনও সমস্যা না হয়। ইমতিয়াজউদ্দিনের বাড়িতে যে বিড়ালটিকে রাখা হয়েছিল তাকে মনে হয় জলাতঙ্কের ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। বাবা ও ছেলের মৃত্যুর সঠিক কারণ তদন্তের পর জানা যাবে।