scorecardresearch
 

One Nation, One Election: 'এক দেশ, এক নির্বাচন' অবিলম্বে দরকার? প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারদের মতে...

One Nation, One Election: একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন হলে কী হবে? এর পক্ষপাতীরা বলছেন, এতে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রকৃতি বিরুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা কী মনে করছেন? ভারতের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নবীন বি. চাওলা এই নীতির ভালো-মন্দ মূল্যায়ন করলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক

Advertisement
'এক দেশ, এক নির্বাচন' কার্যকর করার সময় কি সত্যিই এসে গিয়েছে? 'এক দেশ, এক নির্বাচন' কার্যকর করার সময় কি সত্যিই এসে গিয়েছে?
হাইলাইটস
  • প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের অধীনে একটি কমিটি গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
  • এর মাধ্যমে 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • এই ভাবনা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলি মিশ্র মতামত রয়েছে।

One Nation, One Election: প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের অধীনে একটি কমিটি গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর মাধ্যমে 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ভাবনা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলি মিশ্র মতামত রয়েছে। বিরোধী দলগুলি প্যানেলের গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

একসঙ্গে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন হলে কী হবে? এর পক্ষপাতীরা বলছেন, এতে সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রকৃতি বিরুদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা কী মনে করছেন? ভারতের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নবীন বি. চাওলা ও এস ওয়াই কুরেশী এই নীতির ভালো-মন্দ মূল্যায়ন করলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক

নবীন বি. চাওলা- নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় প্রভাব? 
যে কোনও ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে ভাবাটা বোধগম্য। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ঐকমত্যের গ্রহণ করেই বিষয়টি বিবেচনা করাটা কাম্য।

আরও পড়ুন

একযোগে নির্বাচন বেশ বিবেচনার যোগ্য প্রস্তাব। তবে, এর পূর্বশর্ত হল, সামগ্রিক রাজনৈতিক দলগুলির পরামর্শকে গ্রহণ করা। এমনভাবে, যাতে এটি ঘিরে একটি ঐকমত্য গঠিত হয়। তারপরে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীগুলি যেন অনুসরণ করা হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। ঐকমত্য ছাড়া সংবিধানের কোনো সংশোধনী কাম্য নয়।

সারা বছরজুড়েই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন (EC)।  হয় তারা কোনও নির্বাচন পরিচালনা করছে। অথবা পরবর্তী রাউন্ডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ সালে, চারটি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনকে সাধারণ নির্বাচন(GE) একত্রিত করা হয়েছিল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আরও দু'টি বিধানসভা নির্বাচন। তারপর ফের নভেম্বর-ডিসেম্বরে আরও দু'টি। মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট (MCC) সারা দেশেই বা দেশের বেশিরভাগ অংশে বলবৎ ছিল।

নির্বাচন পরিচালনা এখন ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশ নেহাৎ ছোট নয়। সেই সঙ্গে প্রায় ৮১.৬ কোটি ভোটার এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া। নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য বিশাল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারী বাহিনী (CRPF, CISF, BSF ইত্যাদি) মোতায়েন করতে হয়। কারণ রাজনৈতিক দলগুলির, বিরোধীদের, রাজ্য পুলিশের বাহিনীতে সেভাবে ভরসা নেই। পুলিশ মানেই তারা ক্ষমতায় থাকা সরকারকে সমর্থন করে, এমনটাই ধারণা করা হয়। 

Advertisement

এই বিশাল বাহিনীর নিয়োগ, যাতায়াত, রসদ জোগানো বেশ খরচসাধ্য। এছাড়াও, ইসি একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রায় ২,০০০ সাধারণ এবং ব্যয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। সেই সঙ্গে আবার বিধানসভা নির্বাচনে জন্য আনুপাতিকভাবে কম সংখ্যক পর্যবেক্ষক রাখতে হয়। যুগ্ম সচিব বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের প্রায় এক মাস ধরে এই কাজে নিযুক্ত করা হয়। যুগ্ম সচিব হিসেবে আমিও পর্যবেক্ষকের পদে দু'বার নিযুক্ত হয়েছি।  সেই সময়ে আমি তখন তুলনামূলকভাবে ছোট মন্ত্রকে কাজ করছিলাম। তাই এর ফলে আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে বেরিয়ে এসে পর্যবেক্ষকের কাজে যোগ দিতে হয়। ঘন ঘন নির্বাচনের কারণে, কিছু পর্যবেক্ষকেই বারবার নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে।

নির্বাচনের খরচও যে বাঁচবে তাতে সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক দলগুলির জন্যও আলাদা সুবিধা রয়েছে। এতে দলগুলির পাশাপাশি প্রার্থীদেরও আর্থিক সঞ্চয় হবে৷ দীর্ঘ সময়কাল ধরে যখন MCC কার্যকর হয়, তখন উন্নয়নমূলক এবং কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সরকার প্রায়শই এই বিষয়ে অভিযোগ করেছে। তাঁদের সরকারী কর্মসূচি নির্বাচনের সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।

প্রাথমিকভাবে বেশ মোটা অঙ্কের খরচ হবে। প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (বর্তমানে প্রতি ভোট কেন্দ্রে একটি) এবং ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার ট্রেইল (VVPAT) প্রিন্টারের প্রয়োজন হবে। 

সংবিধানে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির জন্য পাঁচ বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় (J&K-এর ক্ষেত্রে ছয়টি)। এই চক্রটিকে রিস্টোর করতে হলে, সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রয়োজন হবে।  তবে লোকসভা এবং কোনও রাজ্য বিধানসভা আস্থা ভোটে হারলে কী করা দরকার, তা নির্ধারণ করতেও রাজনৈতিক পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।

সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে? লোকসভা দ্রুত ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে কে সরকার পরিচালনা করবে? রাষ্ট্রপতি কি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবেন? সরকার যদি ১৩ দিনের মধ্যে পড়ে(একবার যেমন হয়েছিল) তাহলে কি অবিলম্বে পুনরায় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে? যদি একটি সরকার তার মেয়াদের মাঝপথেই পড়ে যায়, তাহলে কি একটি 'অনাস্থা' প্রস্তাবের পর 'আস্থা' প্রস্তাব করা যেতে পারে? যাতে তার মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়? ডক্টর ইএম নাচিয়াপ্পানের অধীনে একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বারা এই সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের সমাধান করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫-এ তার রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রস্তাবিত সমাধান হল, নির্বাচন দু'টি পৃথক ধাপে অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিছু সংখ্যক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। বাকিগুলি আড়াই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে পারে। 

ইসিকে সাংবিধানিক সংস্থা হতে হবে। সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই সম্পর্কিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বর্তমানে এই সংস্কার প্রস্তাব বিবেচনা করার সময় এসে গিয়েছে। আরও বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে সরকারের কাছে। এগুলিও জরুরি বিবেচনার প্রয়োজন।

এস ওয়াই কুরেশী- অবাস্তব ভাবনা?

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির ইশতেহারে লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত এবং পৌরসভাগুলির একযোগে নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রস্তাবের উত্থাপন করেছিলেন। তারপর থেকেই বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সরকার এটিকে আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশন এবং সংসদের একটি স্থায়ী কমিটির কাছে রেফার করেছে। তারা এর সমর্থনে নিম্নলিখিত কারণগুলি জানিয়েছে: ১) পৃথক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রচুর ব্যয় হয়। ২) আদর্শ আচরণবিধি মানলে অচলাবস্থা আসতে পারে। 3) অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা প্রভাবিত হয়। ৪) সরকারি কর্মীদের উপর বোঝা তৈরি হয়। তাঁদের অফিসের কাজকর্ম ব্যাহত করে। প্রথমে উত্থাপিত সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করা যাক।

Advertisement

প্রথমত, নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকারের ব্যয় এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের প্রচারের ব্যয়, দু'টিই খরচের খাতায় পড়ে। দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র নতুন স্কিম বন্ধ করা হয়েছে কারণ এগুলি ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার সামিল। তৃতীয়ত, এটি সত্য নয় যে স্বাভাবিক পরিষেবা ব্যাহত হয়। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার কোনও কর্মীকে নির্বাচনী কাজে লাগানো হয় না। চতুর্থত, নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় জেলা প্রশাসন অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু ভোটগ্রহণ কর্মীরা মূলত শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত, তাই এটি বিদ্যালয়ের রুটিন কাজ ব্যাহত করে। স্থায়ী কমিটির তালিকাভুক্ত এই চারটি বিষয় ছাড়াও নির্বাচনের সময় জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

একযোগে নির্বাচনের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তিগুলিও বেশ জোরালো। প্রথমত, লোকসভা এবং বিধানসভার মেয়াদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলে না। ১৬টি লোকসভার মধ্যে সাতটি অকালে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।  

দ্বিতীয়ত, পাঁচ বছরে একাধিকবার ভোটারদের মুখোমুখি হতে হলে রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, ভোটের সময় অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এটি তৃণমূল পর্যায়ের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। চতুর্থত, আইন/বিধির কঠোর প্রয়োগ, যেমন ব্যক্তিগত ও সরকারী সম্পত্তির অ-বিকৃতকরণ, শব্দ ও বায়ু দূষণ সীমিত করা, প্লাস্টিকের উপর নিষেধাজ্ঞা, ইত্যাদি পরিবেশের উপকার করে। পঞ্চমত, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করা, লাইসেন্সকৃত অস্ত্র বেশি পরিমাণে জমা রাখা এবং বিচারাধীন জামিন অযোগ্য ওয়ারেন্ট কার্যকর করার মতো ইসি কর্তৃক গৃহীত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে অপরাধের গ্রাফও কমেছে। সবশেষে, স্থানীয় সমস্যা এবং জাতীয় সমস্যাগুলিও আলাদা হয়ে যায়।

পাঁচ বছরে একবার একযোগে নির্বাচন করলে এবং কয়েক ধাপের পরিবর্তে একদিনে তা সম্পন্ন করতে পারলে ইসি খুশিই হবে। যাইহোক, এতে বিশাল লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ এবং আর্থিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনও প্রয়োজন। তাছাড়া বিভিন্ন আইনি এবং সাংবিধানিক বিষয় রয়েছে। সেই কারণে একযোগে নির্বাচন করানো বেশ কঠিন। যতক্ষণ না রাজনৈতিক দলগুলি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে, এটি বাস্তবায়িত করা কঠিন। আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলির ব্যয়ের উপর একটি মাত্রা রেখে খরচ কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। 



খবরটি ইংরাজীতে পড়তে ক্লিক করুন এইখানে।

Advertisement