scorecardresearch
 

Hemant Soren Wife : জেলে যেতে পারেন হেমন্ত, মুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন তাঁর স্ত্রী? কে এই কল্পনা

বিজেপি ক্রমাগত দাবি করছে, হেমন্ত সোরেন গ্রেফতারের ভয়ে তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেনের হাতে রাজ্যের কমান্ড হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও কল্পনা সোরেনকে ঝাড়খণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি বহুদিন ধরেই করা হচ্ছে।

Advertisement
Hemant Soren Kalpana Soren Hemant Soren Kalpana Soren
হাইলাইটস
  • জেলে যেতে পারেন হেমন্ত সোরেন
  • মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন তাঁর স্ত্রী কল্রনা ?

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সোমবার দাবি করেন, হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেনকে ঝাড়খণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তুতি চলছে। হেমন্ত তাঁর সমস্ত সহকর্মী বিধায়কদের লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে রাঁচিতে ডেকেছেন। হেমন্ত সড়কপথে রাঁচিতে পৌঁছে কল্পনার নাম ঘোষণা করবেন। বিজেপির এই দাবির পর ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি উত্তপ্ত। এই দাবিগুলি বিহারের ২৭ বছরের পুরোনো রাজনৈতিক রাজ্যাভিষেকের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেই সময় আরজেডি প্রধান লালু যাদবের গ্রেফতারির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার বাঁচাতে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে চমকে দিয়েছিলেন লালু।

বিহারের সেই রাজনৈতিক কাহিনিতে ঢোকার আগে জানা দরকার, ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন কোন মামলায় জড়িত এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, হেমন্ত সোরেন ঝাড়খণ্ডের জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পর্কিত মানি লন্ডারিং মামলায় অভিযুক্ত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। ইডির তরফে হেমন্তকে দশমবারের জন্য সমন জারি করা হয়েছে। হেমন্তকে ২৯ বা ৩০ জানুয়ারি যে কোনও দিন হাজির হতে বলা হয়েছিল। সোমবার, ইডি দল দিল্লি এবং রাঁচিতে সোরেনের বাসভবনে গিয়েছিল, কিন্তু তাঁকে খুঁজে পায়নি। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, গ্রেফতারি এড়াতে সোরেন নিখোঁজ হয়েছেন। যদিও হেমন্তের পক্ষ থেকেও কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি।

এই কারণেই বিজেপি ক্রমাগত দাবি করছে, হেমন্ত সোরেন গ্রেফতারের ভয়ে তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেনের হাতে রাজ্যের কমান্ড হস্তান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও কল্পনা সোরেনকে ঝাড়খণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি বহুদিন ধরেই করা হচ্ছে। তবে হেমন্তের স্ত্রী কল্পনা সোরেন এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা প্রধান শিবু সোরেনের পুত্রবধূ রাজনৈতিক শিরোনাম থেকে দূরে থাকেন। তিনি স্কুল চালান।

আরও পড়ুন

কল্পনা সোরেনর বাড়ি ওড়িশার ময়ুরভঞ্জে। ১৯৭৬ সালে রাঁচিতে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনা একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। রাঁচির একটি সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক হন। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এ হেমন্তকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। 

Advertisement

যদিও কল্পনাকে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে খুব কমই দেখা যায়। তিনি একটি প্রাইভেট স্কুল চালান এবং একজন ব্যবসায়ীও। তবে, নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশুদের জন্য সংগঠিত কর্মসূচি সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রায় দেখা যায়। রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের মতে, কল্পনা যদি নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান তবে তিনি ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে হয়তো পারবেন। 

বিপাকে হেমন্ত ? 

রাঁচিতে সেনাবাহিনীর দখলে থাকা ৪.৫৫ একর জমির বেআইনি ক্রয়-বিক্রয় মামলায়  বাদগাই এলাকার রাজস্ব দফতরের আধিকারিক ভানু প্রতাপ প্রসাদকে গ্রেফতার করেছিল ED। তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি কাগজপত্র ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। ইডি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে এই নথিগুলির তদন্ত এবং তাদের সম্পর্কিত তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রদীপ বাগচি, বিষ্ণু কুমার আগরওয়াল, ভানু প্রতাপ প্রসাদ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ড পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দায়ের করা একাধিক এফআইআরের ভিত্তিতে মানি লন্ডারিং আইনের ধারায় মামলা নথিভুক্ত করে ইডি তিনটি জমি কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করেছিল। এই মামলার তদন্ত যত এগিয়েছে, ইডি এখনও পর্যন্ত ১৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। 

তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ভূমি মাফিয়ার অনুকূলে এসব প্লট হস্তান্তর করেছেন। গ্রেফতার হওয়া ১৪ জন অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন প্রদীপ বাগচি, আফসার আলি, সাদ্দাম হুসেন, ইমতিয়াজ আহমেদ, তালহা খান, ফাইয়াজ খান, ভানু প্রতাপ প্রসাদ, ছাভি রঞ্জন, আইএএস (রাঁচির প্রাক্তন ডিসি) দিলীপ কুমার ঘোষ, অমিত কুমার আগরওয়াল, বিষ্ণু কুমার আগরওয়াল। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ২৩৬ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।

ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বিধায়ক ডঃ সরফরাজ আহমেদ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বছরের শেষ দিনে হঠাৎ পদত্যাগ করেছিলেন। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের কাছে ক্রমাগত সমন পাঠাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এমতাবস্থায় গুজব আরও জোরদার হয় যে, হেমন্ত জেলে গেলে তার স্ত্রী কল্পনা সোরেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন। 

বিরোধী নেতা বাবু লাল মারান্ডি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, হেমন্ত সোরেন তার রাজবংশীয় রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। মারান্ডি লালু যাদব ও তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীর উদাহরণও দিয়েছেন। বিজেপি বলেছে, সরফরাজের সংরক্ষিত আসনটি খালি করা হয়েছিল শুধুমাত্র কল্পনাকে নির্বাচনে লড়তে দেওয়ার জন্য। এই সমস্ত জল্পনা-কল্পনার মধ্যে হেমন্ত সোরেন বিধায়কদের একটি বৈঠক ডেকে জানিয়েছিলেন, বিজেপি কেবল গুজব ছড়াচ্ছে। আমাদের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই।

কী বললেন বাবুলাল মারান্ডি... 

বিজেপি নেতা বাবুলাল মারান্ডি বলেছিলেন, ঝাড়খণ্ডেও বিহারের জঙ্গলরাজের পুনরাবৃত্তির চেষ্টা চলছে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় জেলে যাওয়ার আগে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীও করেছিলেন লালু যাদব। জেলে যাওয়ার মধ্য দিয়েই তার পুরো জীবন কেটে যায়। এখন হেমন্ত সোরেনের সমস্ত প্রচেষ্টা, যিনি আদিবাসীদের জমি ও সম্পত্তি লুট করে সম্পদ বাড়িয়েছেন, তাও ব্যর্থ হয়েছে, তাই তিনি তার স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে জেলে যেতে চান। 

২৭ বছর আগে বিহারে কী ঘটেছিল... 

১৯৯৬ সালের কথা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। তার বিরুদ্ধে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল। সিবিআই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ফাঁদ শক্ত করতে শুরু করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে লালুর পক্ষে সরকার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। জল্পনা শুরু হয়, লালুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারইমধ্যে ২৫ জুলাই, ১৯৯৭ সালে লালু তাঁর সিদ্ধান্তে সবাইকে অবাক করে দেন। স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে বিহারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী করে দেন। তবে রাবড়ি মুখ্যমন্ত্রী হলেও সব সিদ্ধান্তই নিতেন লালু যাদব। রাবড়ি তার প্রথম মেয়াদে দুই বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এর পরে তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০০ এবং ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তৃতীয়বারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হন।

Advertisement

Advertisement