এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অঙ্গভঙ্গি ও কুকথার অভিযোগ উঠেছে। যেমনটা আজ, মঙ্গলবারও উঠল। সাংসদদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সংসদ চত্বরে দেখা গেল অভিনব দৃশ্য। কল্যাণ নকল করলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের। এমনকি একটি ভাইরাল ভিডিওতে (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি বাংলা ডট আজতক ডট ইন) দেখা গিয়েছে, নিজের মোবাইল ফোনে কল্যাণের সেই অঙ্গভঙ্গি রেকর্ড করছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এই ঘটনায় তীব্র আপত্তি জানান ধনখড়। তিনি বলেন, 'সাংসদরা যা করেছেন তা অনভিপ্রেত এবং লজ্জাজনক।'
রাজনৈতিক মহল সূত্রে খবর, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কাণ্ড অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতে এখনকার প্রধানমন্ত্রীকে ভোটের ‘থাপ্পড়’ মারার কথা বলেছিলেন। আবার প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিয়ে করা-না করা নিয়ে 'কুরুচিকর' মন্তব্য করে জনসভা গরম করেছেন। লোকসভা চলাকালীন বিপক্ষ সাংসদকে তুইতোকারি করতেও ছাড়েননি। কিন্তু কল্যাণের কোনও অনুতাপ নেই। তিনি নাকি সংসদের বাইরে সাফ জানান, তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। ফলে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে করবেন।
সূত্রের খবর, ওই মন্তব্যের জেরে কল্যাণের উপরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শ্রীরামপুরের সাংসদ ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার হুমকি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডি। যাকে‘আধা মন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন কল্যাণ। সূত্রের খবর, এমনকী কল্যাণকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে আর্জি জানানোর কথাও ভেবেছিল বিজেপি।
একবার সংসদে নাম না করে কল্যাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। তাঁকে কল্যাণ সংসদে বলেছিলেন ‘তুই বোস আগে’। শোনা যায়, ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির পাশে এসে দাঁড়ান সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও। কল্যাণ কিন্তু নির্বিকার। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন,“ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। ‘ভাগ মমতা ভাগ’ যদি কুকথা না হয়, তা হলে আমি কেন প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে পারব না?” এর আগেও একাধিক বার কল্যাণের অভব্য আচরণের সাক্ষী থেকেছে লোকসভা। এমনকী ইউপিএ আমলে প্রবীণ সাংসদদের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে ছুটে যেতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এদিকে, গত তিন দিনে সংসদে রেকর্ড বিরোধী সাংসদ বহিষ্কার ঘিরে বিতর্ক জারি রয়েছে। যাতে এদিন অন্য মাত্রা যোগ করেছেন তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সাসপেন্ড হওয়া বিরোধী সাংসদদের একাংশ সংসদের অভ্যন্তরে গান্ধীমূর্তির কাছে ধর্না দিচ্ছিলেন। সেখানেই দেখা যায়, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে ভেঙাচ্ছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই অঙ্গভঙ্গির ভিডিয়ো রেকর্ড করছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। কল্যাণের অঙ্গভঙ্গি দেখে সেখানে উপস্থিত সকল বিরোধী সাংসদরা একযোগে হাসছেন। গোটা ঘটনা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরই কল্যাণের অঙ্গভঙ্গি নিয়ে মুখ খোলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়।