scorecardresearch
 

Hiranandani vs Mahua: হীরানন্দানির হলফনামা, পাল্টা মহুয়া, 'টাকা নিয়ে প্রশ্ন' মামলার রহস্য কী?

বিজেপি সাংসদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানি। রাজসাক্ষীও হয়েছেন তিনি। দর্শন দাবি করেছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মহুয়ার সংসদীয় লগইন ব্যবহার করেছিলেন।

Advertisement
মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ।
হাইলাইটস
  • বিজেপি সাংসদের অভিযোগ স্বীকার দর্শন হীরানন্দানির।
  • আগামী ২৬ অক্টোবর শুনানি করবে সংসদের এথিক্স কমিটি।

ক্রমেই অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। টাকার বিনিময়ে প্রশ্নের অভিযোগে বিদ্ধ মহুয়ার বিচার চলছে সংসদের এথিক্স কমিটিতে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এবং আইনজীবী জয় আনন্দ দেহাদ্রাই, তার শুনানি আগামী ২৬ অক্টোবর করবে সংসদের এথিক্স কমিটি। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছেন, শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির থেকে টাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আদানি গোষ্ঠীকে নিশানা করে সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন মহুয়া মৈত্র।    

কাঠগড়ায় মহুয়া 

বিজেপি সাংসদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানি। রাজসাক্ষীও হয়েছেন তিনি। দর্শন দাবি করেছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মহুয়ার সংসদীয় লগইন ব্যবহার করেছিলেন। এদিকে, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন মহুয়া। শুক্রবার শুনানির আগেই দর্শনের বক্তব্য বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে মহুয়াকে। এবার দেখা যাক দর্শন হীরানন্দানির পুরো চিঠিতে কী লেখা আছে এবং মহুয়া মৈত্রই বা তার কী জবাব দিয়েছেন- 

আরও পড়ুন

দর্শন হীরানন্দানির হলফনামা 

হীরানন্দানি গোষ্ঠীর সিইও দর্শন হীরানন্দানি হলফনামায় মেনে নিয়েছেন, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সংসদীয় লগইন আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে সংসদে প্রশ্ন তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি) কোম্পানি ওডিশায় ধামরা এলএনজি কেন্দ্র বেছে নেওয়ার পর আদানিকে নিশামা করে প্রশ্ন করেছিলেন। সেজন্য মহুয়ার সংসদীয় লগইন অ্যাক্সেস করেছিলেন। 

মহুয়ার বিলাস-বৈভবের জন্য খরচ

রিয়েল এস্টেট শিল্পপতি হিরানন্দানির দাবি, তৃণমূল সাংসদ দামী বিলাসবহুল জিনিসপত্র (হ্যান্ডব্যাগ ইত্যাদি), দিল্লিতে তাঁর বাংলো মেরামত, ভ্রমণের খরচ, ছুটির দিন ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে-বেড়ানোর খরচ দিয়েছেন তিনি। মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে ২০১৭ সালে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল দর্শনের। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। হিরানন্দানি আরও দাবি করেছেন যে তিনি আশা করেছিলেন যে এই বন্ধুত্বের কারণে বিরোধী দলগুলির শাসনে থাকা রাজ্যগুলিতে নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা পাবেন।

Advertisement

দর্শন হিরানন্দানির হলফনামা নিয়ে কী বললেন মহুয়া?

শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির স্বীকারোক্তির পর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিএমসি সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এর পাশাপাশি তিনি ২ পৃষ্ঠার একটি খোলা চিঠিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি হীরানন্দানির অভিযোগের ভিত্তি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। মহুয়া মৈত্র এক্স হ্যান্ডেলে বিবৃতি জারি করে হীরানন্দানির হলফনামার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, সাদা কাগজে অভিযোগ তোলা হয়েছে। কোনও অফিসিয়াল লেটারহেড বা নোটারাইজড লেটারে নেই। চিঠির (হলফনামা) বিষয়বস্তুই তামাশার। তিনি লিখেছেন, দর্শন হিরানন্দানির হলফনামা দেখে কিছু প্রশ্ন উঠেছে, যার উত্তর জানা জরুরি। 

১। দর্শন হীরানন্দানিকে সিবিআই বা এথিক্স কমিটি তলব করেনি। কোনও তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে তলব করেনি, তাহলে তিনি কার কাছে এই হলফনামা জমা দিয়েছেন? 

২। এই অভিযোগগুলি সাদা কাগজে লেখা হয়েছে, অফিসিয়াল লেটারহেড বা নোটারাইজড চিঠিতে নয়। দেশের একজন সম্মানিত ও শিক্ষিত শিল্পপতি কেন শ্বেতপত্রে স্বাক্ষর করবেন যদি না তার মাথায় বন্দুক ঠেকানো হয়?

৩। দর্শন হিরানন্দানির হলফনামার বিষয়বস্তু রম্যরচনার শামিল। এটা জলের মতো পরিষ্কার, প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও বিজেপির আইটি সেলের লোকেরাই লিখে দিয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে মোদী ও গৌতম আদানির নির্দেশ। মহুয়া মৈত্র আরও বলেন, 'প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পপতির সঙ্গে আমার নাম জুড়ে তথাকথির দুর্নীতির জাল তৈরি করা হয়েছে।'
 
শার্দুল শ্রফ ও সিরিল শ্রফ সম্পর্কে ভাই। পেশাগতভাবে দুজনেই আলাদা হয়ে গিয়েছেন। সিরিল শ্রফ গৌতম আদানির 'আত্মীয়' এবং সেবিতে কর্মরত ছিলেন। সেবি নিজেই হিন্ডেনবার্গ মামলার তদন্ত করছিল। রাহুল গান্ধী এবং শশী থারুর এমন দুজন নেতা যাঁদের সরকার ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে। সরকারের গোপন কর্মকাণ্ড ফাঁস করে এসেছেন সাংবাদিক সুচেতা দালাল। এতে স্পষ্ট, নির্দেশ এসেছে,'সবার নাম ঢুকিয়ে দাও, এমন সুযোগ আর আসবে না।' 

৪। উদাহরণ হিসেবে দর্শনের চিঠির দ্বাদশ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে মহুয়ার দাবি, তিনি ভয় পেয়ে আমার আবদার মেটাতেন বলে দাবি করেছেন দর্শন, যিনি ভারতের অন্যতম বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালান। উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতে তাঁর প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী। সদ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশে সফররত শিল্পপতিদের তালিকায় ছিলেন। এমন ধনী শিল্পপতি, যাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি যোগ রয়েছে তিনি প্রথমবারের বিরোধী সাংসদের আবদার মেটাতে বাধ্য হবেন? কেন উপহার দেবেন? এটা একেবারেই অযৌক্তিক।'

৫। মহুয়া মৈত্র প্রশ্ন তোলেন, দর্শন কেন সাংবাদিক সম্মেলন করেননি? কেন তিনি নিজে এসব অভিযোগ করেননি বা টুইট করেননি বা কেন তাঁর কোম্পানি বিবৃতি প্রকাশ করেনি? যদি সত্যিই তিনি এটি 'স্বীকার' করে থাকেন তাহলে কেন সংবাদমাধ্যমে ফাঁস না করে আনুষ্ঠানিকভাবে করছেন না। মহুয়ার বক্তব্য, 'সত্য জলের মতো পরিষ্কার। আদানি ইস্যুতে আমাকে যে কোনওভাবেই চুপ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে বিজেপি সরকার। জয় দেহাদ্রাই 'সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী' নন যে তিনি এটা করতে পারেন।

'জয় দেহাদ্রাই আমায় ফাঁসাতে চায়' 

আমাকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছে জয় দেহাদ্রাই। আমার সঙ্গে ওঁর অতীতের তিক্ততা রয়েছে। তাই যে কোনও উপায়ে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চায়। যদি সত্যিই ও আবাস সব দুর্নীতির সাক্ষী হয়ে থাকলে কেন আমার সঙ্গে থাকার সময় ফাঁস করলেন না? প্রকাশ্যে আসার জন্য এতদিন অপেক্ষা করলেন কেন? উপরন্তু, ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে নিশিকান্ত দুবেকে চিঠি পাঠালেন কেন? এমন একজন ব্যক্তি যাঁকে আমি বারবার সংসদে এবং সংসদের বাইরে আক্রমণ করেছি। যাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব দায়ের করেছি। নিশিকান্ত কেন জয়ের চিঠির সত্যাসত্য যাচাই না করে বিষয়বস্তু পিটিআই-কে ফাঁস করেছিলেন? কেন কোনও তদন্তের আগে মিডিয়া সার্কাস তৈরি করা হল?

Advertisement

একটি মামলা, একাধিক যোগসূত্র

'টাকা নিয়ে প্রশ্ন' মামলায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির নামই এখন শিরোনামে। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একাধিক নাম যুক্ত রয়েছে। তাঁদের নাম জানাটাও জরুরি। আইনজীবী জয় দেহাদ্রাহি অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বিষয়টি সামনে আনেন। শিল্পপতি নিজেই স্বীকার করলেন যে 'হ্যাঁ, আমি টাকা দিয়েছি।'

Advertisement