আরেকটু হলেই জোট গঠনের আগেই ফাঁক তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে মাঠে নামলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথাতেই মিটল আপ-কংগ্রেস দূরত্ব। দিল্লি অধ্যাদেশ ইস্যুতে সংসদে আপকে সমর্থনে রাজি হল কংগ্রেস। আর তারপরেই ১৭-১৮ জুনের বিরোধী জোট গঠনের বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
লক্ষ্য কেন্দ্রবিরোধী জোট গড়ে তোলা। গত ২৩ জুন পাটনায় ১৫টি দলের নেতারা এক ছাদের তলায় এসেছিলেন। সেই ঐক্যমঞ্চ থেকে BJP-র নেতৃত্বাধীন NDA সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে লড়ার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এবার সেই জোট গঠনের দ্বিদীয় পর্যায়ের বৈঠক।
১৭-১৮ জুলাই কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে সেকেন্ড ইনিংস। ফের জোট বৈঠকে বসবেন বিরোধী দলের নেতারা। তবে জোট গঠন তো আর মুখের কথা নয়। বিরোধী দলগুলিরও নিজেদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত মাসের বৈঠকে আম আদমি পার্টি স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, জাতীয় মঞ্চে কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব, আর দিল্লিতে তাদের সঙ্গে বিরোধ থাকলে চলবে না। আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দেন, কংগ্রেস যদি দিল্লি অধ্যাদেশ নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার না করে, তাহলে আমরা বৈঠকে যাব না।
সেই সময়েই আসরে নামেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মিলে শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্বকে বোঝান। জানান, কংগ্রেস যদি আপ-কে সমর্থন না করে, তাহলে জোট দিল্লি-পঞ্জাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এরপরেই রাজি হয় কংগ্রেস। সংসদে কংগ্রেসের সমর্থনের আশ্বাস পেয়ে চিঁড়ে ভিজেছে আপ-এর। বেঙ্গালুরুতে বৈঠকে যাবেন বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল।
পাটনার প্রথম বৈঠকের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। এদিকে দ্বিতীয় বৈঠকের আগেই ড্রাইভিং সিটে চলে এসেছে কর্ণাটকের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস। বেঙ্গালুরু বৈঠকের সভাপতিত্ব করছে তারা। সভাপতি হিসেবে এজেন্ডা তৈরির দায়িত্বও থাকবে তাদের উপর। পাটনার বৈঠকে সেই ভূমিকা ছিল নীতীশ কুমারের। একইভাবে, এবার রাহুল গান্ধী বেঙ্গালুরুতে বৈঠক সামলানোর দায়িত্বে রয়েছেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে মোট ২৬টি দলকে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। অর্থাত্ প্রায় ১০টি নতুন দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বেঙ্গালুরুর বৈঠকে জোটের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। ১৭-১৮ জুলাইতেই জোটের সমন্বয় কমিটি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, জোটের গঠনের পাশাপাশি রাজ্য ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা হবে দুইদিনের বৈঠকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ১৮ জুলাইয়ের বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীও যোগ দেবেন। বৈঠকের আগে ১৭ জুলাই রাতে সব বিরোধী দলের নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই নৈশভোজের বুদ্ধিও সোনিয়া গান্ধীর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীর যোগদান বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। কেন? কারণ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী অন্য সব বিরোধী দলের থেকে সমর্থন না-ও পেতে পারেন। বিশেষত, এমন অনেক নেতাই রয়েছেন, যাঁরা রাহুলকে এড়িয়ে যান। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর পাশে দাঁড়াতে রাজি। আর সেই তুরুপের তাসই ব্যবহার করছে কংগ্রেস।
সোনিয়া গান্ধীর এই সক্রিয়তার আরও একটি অর্থ দাঁড়াচ্ছে। একদিকে বিজেপি এনডিএ-র সম্প্রসারণের জন্য পুরনো জোট শরিকদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে একইভাবে, কংগ্রেস এখন তাদের প্রাক্তন সভাপতির মাধ্যমে পুরনো বন্ধুদের একত্রিত করছে। উল্লেখ্য. ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরেও, সোনিয়া গান্ধী ছোট দলগুলিকে একত্রিত করে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (UPA) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ফলে জোট রাজনীতি নিয়ে তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতা কাজে আসতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রশিদ কিদওয়াই জানিয়েছেন, 'এনডিএ এবং ইউপিএ থেকে বেশ কিছু দল বেরিয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু নতুন দল যোগ দিচ্ছে। দেশের সব দলকে মাত্র দু'টি জোটে একত্রিত করাটা কঠিন। জাতীয় স্তরে যখনই কোনও জোট তৈরি হয়েছে, তার মুখ হয়েছে কংগ্রেস বা বিজেপি। এনডিএ-র সারথি বিজেপি এবং ইউপিএ-র কংগ্রেস।'