কোটায় আরও এক মৃত্যু। চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইঁদুর দৌড় থেকে সরে দাঁড়াতে মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আরও এক কিশোর। রাজস্থানের প্রবেশিকা প্রস্তুতির শহরে চলতি বছরে এই নিয়ে ১৯ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করল।
সদ্য ১৮-এ পা দিয়েছিল মনজোত সিং। কোটার হাজার-হাজার পড়ুয়ার মধ্যে সে-ও ছিল একজন। চিকিৎসক হওয়ার প্রবেশিকা NEET-এর প্রস্তুতি নিতে সেখানে গিয়েছিল সে। অত্যন্ত মেধাবী। কিন্তু পরিবার ছেড়ে আলাদা থাকা, পড়াশোনার অত্যাধিক চাপে অবসাদে ভুগছিল সে।
মনজোতের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের রামপুরে। দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯৩% নম্বর নিয়ে পাশ করে সে। গত এপ্রিলে স্কুলেরই আরও ৩ বন্ধুর সঙ্গে কোটায় আসে। সেখানে এক প্রবেশিকা প্রস্তুতির কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। বন্ধুদের সঙ্গে একই হোস্টেলে থাকত।
মনজোতের বন্ধুদের কথায়, পড়াশোনায় তুখোড় ছিল সে। কোচিংয়ের পরীক্ষাতে পরপর দারুণ রেজাল্ট করছিল। ঠাট্টা-তামাশাও করত।
আত্মহত্যার আভাস দিয়েছিল...
এই মজা করার ছলেই নিজের আত্মহত্যার প্রবণতার জানান দিয়েছিল মনজোত। কোটায় পড়ুয়াদের মৃত্যুর খবর শুনে বলেছিল, 'এরপর আমার নাম আসবে'। বন্ধুরা তাই শুনে ঘাবড়ে যায়। কিন্তু ফাজিল ছেলে ভেবে কেউ আর এটা নিয়ে বেশি ভাবেনি।
আর সেই কারণেই বৃহস্পতিবার সকালে যখন ঘরের ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ মেলে, কেউ নিজেদের বিশ্বাস করতে পারছিল না। এত হাসি-খুশি, মেধাবী, পরিশ্রমী একজন এমন পথে গেল!
'সরি, শুভ জন্মদিন বাবা'
ঘরের দেওয়ালে তিনটি স্টিকি নোট আটকেছিল মনজোত। একটিতে লেখা সরি। পাশেরটিতে সে জানিয়েছে, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তার বন্ধুদের যেন বিরক্ত না করা হয়। আর তৃতীয়টিতে বাবাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে সে।
কোটা
রাজস্থানের কোটায় চারদিকে শুধুই বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির কোচিং সেন্টার। দেশের নানা রাজ্য থেকে এখানে পড়ুয়ারা NEET, AIEEE, UPSC-র মতো কঠিন প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিতে আসে।
অনেকেই এই কঠিন পড়াশোনা, পরীক্ষার ইঁদুর দৌড়ের চাপ সহ্য় করতে পারে না। কিন্তু পরিবারের প্রত্যাশা বজায় রাখতে না পারা, ব্যর্থতা, বাড়ি ফেরা নিয়ে লজ্জা থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আর সেই কারণেই কোটায় প্রতি বছরই বাড়ছে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনা। পড়ুয়াদের জীবন নিয়ে ইউটিউবে জনপ্রিয় সিরিজ 'কোটা ফ্যাক্টরি'ও রয়েছে।
গত বছর কোটায় ১৫ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছিল।