লোকসভা নির্বাচনের শেষ তথা সপ্তম পর্বের প্রচার শেষ হওয়ার পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার আধ্যাত্মিক যাত্রার জন্য কন্যাকুমারীতে যাবেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ১ জুন পর্যন্ত বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যান করবেন। এদিকে কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রীর মেডিটেশনের তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
সিপিআই(এম)-এর তামিলনাড়ুর সেক্রেটারি কে. বালাকৃষ্ণণ কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানের সময় সংবাদ সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছেন ।
বালাকৃষ্ণাণ তার অভিযোগে বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মেডিটেশন করতে চান, এটি তার ব্যক্তিগত পছন্দ। কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে এর লাইভ সম্প্রচার মোদী এবং বিজেপির জন্য একটি বড় প্রচার সামগ্রী হয়ে উঠবে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর শিরোনামে থাকা এমসিসির গুরুতর লঙ্ঘন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
ECI -এর সঙ্গে দেখা করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল
সিপিআই (এম) সেক্রেটারি ছাড়াও, কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে, প্রধানমন্ত্রী ৩০ মে থেকে ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত ধ্যান করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এই বিষয়ে তথ্য দিয়ে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন যে আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি যে ৪৮ ঘন্টার সাইলেন্ট পিরিয়ডে কাউকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রচারের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, যে কোন নেতা যাই করুক না কেন, নীরবতা পালন করুন বা অন্য কিছু করুন। কিন্তু এই পরোক্ষ প্রচার সাইলেন্ট পিরিয়ডে হওয়া উচিত নয়। আমরা অভিযোগ করেছি যে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছেন যে তিনি ৩০ মে সন্ধ্যা থেকে ১ জুন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মৌনব্রত পালন করবেন। এটি আদর্শ আচরণবিধির লঙ্ঘন। এগুলি এমন উপায় যা আপনি মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেকে প্রচার বা সম্প্রচার করছেন।
সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়: অভিষেক মনু সিংভি
আমরা নির্বাচন কমিশনের সামনে দুটি খুব সহজ বিষয় রেখেছি, হয় প্রধানমন্ত্রীকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর ১ জুন সন্ধ্যায় নীরবতা ও আধ্যাত্মিক ব্রত শুরু করতে হবে, তবে তিনি যদি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে এটি শুরু করার জন্য জোর দেন তবে এর মিডিয়া সম্প্রচার । নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি নিজেই এই শেষ পর্বে প্রার্থী। ৫০ টিরও বেশি লোকসভা আসনের জন্য নির্বাচন রয়েছে এদিন এবং এই ধরণের সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এছাড়াও, বিজেপির একটি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে বিজ্ঞাপনগুলি নিয়ে কথা বলার সময়, তিনি বলেন যে এই বিজ্ঞাপনগুলির মাধ্যমে ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সরাসরি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। তাদের বিজ্ঞাপনও আমরা নির্বাচন কমিশনে দিয়েছি।
মেডিটেশন কেন হচ্ছে: DMK
ডিএমকে-র এলাঙ্গোভান বলেছেন যে আমি জানি না কেন এই মেডিটেশন ঘটছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেও এই ঘোষণা করা যেত, কিন্তু তিনি শেষ পর্যায়ে এটি করছেন কারণ তিনি চান যে লোকেরা তাকে ভগবানের ভক্ত মনে করুক। তিনি মানুষকে দেখাতে চান যে তিনি একজন হিন্দু। তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, যাতে মানুষ তাকে ভোট দেয়। এটি জনগণকে প্রভাবিত করার একটি পরোক্ষ উপায় যা নির্বাচন কমিশনের সকল নিয়মের পরিপন্থী।
মমতার কটাক্ষ
বারুইপুরের সভা থেকে এই নিয়ে মোদীকে নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানে বসা নিয়ে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সেই ছবি টেলিভিশনের পর্দায় সম্প্রচারিত হলে সেটা নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ করবে। সেক্ষেত্রে ৩০ মে সন্ধ্যে ৬টার পর প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানে বসা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে। ধ্যান করলেই ক্যামেরা ছুটবে। প্রত্যেকবার দেখবেন, নির্বাচনের শেষ দফার ৪৮ ঘণ্টা আগে কোথাও না কোথাও ঢুকে বসে থাকেন। আর লোককে দেখায়, ধ্যান করছি।’
এদিকে , বিজেপি কর্মকর্তারা বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর তার আধ্যাত্মিক অবস্থানের জন্য কন্যাকুমারীকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি দেশের প্রতি বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেখায়। তারা বলছেন যে প্রধানমন্ত্রী যে শিলাটির উপর ধ্যান করবেন তা বিবেকানন্দের জীবনে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলেছিল। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, বিবেকানন্দ সারা দেশ ভ্রমণের পর এখানে পৌঁছেছিলেন, তিন দিন ধ্যান করেছিলেন এবং একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৪৫ ঘণ্টা অবস্থানের সময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকবে। এর পাশাপাশি বেসরকারি নৌযানও চলতে দেওয়া হবে না। দেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই জেলায় ২ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কড়া নজরদারি রাখবেন।