উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের শাহি জামা মসজিদে সমীক্ষা ঘিরে অশান্তি। এলাকায় মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন জামা মসজিদের ইমাম তথা আইনজীবী জাফর আলি। তাঁর দাবি, সমীক্ষা চালানোর সময় মসজিদ থেকে অযুর জল সরানোর কথা বলেছিলেন সহকারী মহকুমা শাসক। তার জেরে বাইরে অপ্রচার ছড়িয়ে পড়ে। এসডিএমের আচরণে মানুষ ক্ষুব্ধ হন। মসজিদের বাইরে জড়ো হতে থাকেন। গোটাটাই ষড়যন্ত্র। সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছিল যে ভিতরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তার ফলে এই পরিস্থিতি।
জাফর আলি বলেন,'১৯ নভেম্বরেই মসজিদের সমীক্ষা শেষ হয়। ফের সমীক্ষার কথা জানান অতিরিক্ত মহকুমা শাসক। হঠাৎ করে রবিবার আর একটি সমীক্ষার কথা বলা হয়। আমি মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আবেদন করেছিলাম। পরে শুনলাম, গুলি চালানোর কথা বলছেন এসপি, ডিআইজি ও মহকুমা শাসকরা। তখন আমার কথা শুনে ৭৫ শতাংশ লোকই চলে গিয়েছিল। কয়েকজন ওখানে ছিল'।
পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, সম্ভলে পুলিশি অভিযানের পরে আজ নতুন করে কোনও ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি। মোরাদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুনিরাজ জানিয়েছেন, 'দুই মহিলা-সহ ২১ জনকে ধরা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেফতার করা হবে। এনএসএ-ও আরোপ করা হবে'।
সম্ভলের মসজিদে অশান্তির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ জন পুলিশ কর্মী ও ৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্তা। বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু অবৈধ অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বর্তমানে মোরাদাবাদ রেঞ্জের ৩০টি থানার পুলিশ সম্বলে মোতায়েন রয়েছে। PAC, RAFও মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্টারনেট, স্কুল-কলেজ বন্ধ।
সম্ভলে হিংসার ঘটনায় ৭টি এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। মোট ৮০০ জন দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে সম্ভলের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জিয়াউর রহমান বার্ক এবং স্থানীয় বিধায়কের ছেলে সোহেল ইকবালের বিরুদ্ধেও।
সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ড্রোন দিয়েও দুর্বৃত্তদের ছবি তোলা হয়েছে। গোটা এলাকায় জারি করা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা (আগে ১৪৪ ধারা)।আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।
জেলা আদালতের নির্দেশে রবিবার ফের সম্ভলের শাহি জামে মসজিদের ভিতরে সমীক্ষার কাজ চলছিল। সেই সময় হঠাৎ করেই মসজিদের বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় গাড়িতে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- নাইম, বিলাল আনসারি, নওমান ও মহম্মদ কাইফ। নোমান ও বিলাল আনসারিকে রাত ১১টায় কবর দেওয়া হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন।