উত্তরপ্রদেশের সম্ভল জামে মসজিদের সমীক্ষা ঘিরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, সহিংসতার রূপ নেয় এবং চারজনের প্রাণহানি ঘটে। রাস্তা জুড়ে চলে পাথর ছোড়া, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পি.এ.সি., আর.আর.এফ., এবং আর.এ.এফ.-এর বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
হিংসার প্রেক্ষাপট
১৯ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে জামে মসজিদে জরিপের কাজ শুরু হয়। জরিপকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়, কারণ আবেদনকারীর দাবি ছিল, মসজিদের স্থানে আগে একটি হিন্দু মন্দির ছিল। ১৫২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আমলে এটি ধ্বংস করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। মুসলিম পক্ষের দাবি, এটি ১৯৯১ সালের উপাসনা স্থান আইন লঙ্ঘন।
রবিবার সকালে সমীক্ষার কাজ ফের শুরু হলে বড় একটি দল মসজিদের কাছে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, যখন মসজিদের পেছন থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় এবং আশপাশে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ইট, পাথর এবং ধ্বংসাবশেষ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা
হিংসার জেরে প্রায় দেড় ঘণ্টা শহরজুড়ে অঘোষিত কারফিউর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। বর্তমানে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঘটনায় চারজন নিহত হন। একাধিক পুলিশ কর্মী আহত হন, যার মধ্যে সার্কেল অফিসারকে ছুরি মারা হয় এবং এক কনস্টেবলের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। প্রায় ২১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA) প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
উভয় পক্ষের বক্তব্য
হিন্দু পক্ষ: আদালতের নির্দেশ মেনে জরিপের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তাদের দাবি, মসজিদের স্থলে আগে হরিহর মন্দির ছিল।
মুসলিম পক্ষ: ১৯৯১ সালের উপাসনা স্থান আইন উল্লেখ করে জরিপকে অবৈধ বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, এটি ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত।
জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের প্রতিক্রিয়া
জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেছেন, জমিয়ত সহিংসতার বিরোধী, তবে পুলিশের ভূমিকা বৈষম্যমূলক এবং এটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, হিংসায় জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ এবং স্কুল-কলেজও বন্ধ রাখা হয়েছে।