একজন নারীকেও কি ধর্ষণের দায়ে দোষী করা যায়? সুপ্রিম কোর্ট এখন বিষয়টি বিবেচনা করবে। এখনও অবধি, শুধুমাত্র পুরুষরাই IPC-এর ৩৭৫ ধারার অধীনে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু এখন আদালত খতিয়ে দেখবে ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের মামলায় নারীকে আসামি করা যায় কি না? IPC-এর ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এমন কিছু পরিস্থিতিতেও উল্লেখ করা হয়েছে যার অধীনে একজন নারী একজন পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করতে পারে।
আসলে, এই পুরো বিষয়টি এক ৬২ বছরের বিধবা মহিলার আবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। মহিলার দাবি যে তাঁকেও অকারণে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা 'মিথ্যা ধর্ষণের মামলায়' টেনে আনা হয়েছে। এই বিষয়ে মহিলা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং আগাম জামিনের দাবি জানিয়েছেন। বিচারপতি হৃষিকেশ রায় ও বিচারপতি সঞ্জয় করোলের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এই আবেদনের শুনানি করছে। মহিলার আবেদনের শুনানির সময় বেঞ্চ বলেছিল, 'আইপিসি-র অধীনে শুধুমাত্র একজন পুরুষকেই ধর্ষণের অভিযুক্ত করা যায়।'
পুরো ব্যাপারটা কী?
এটা খুবই জটিল বিষয়। ৬২ বছর বয়সী বিধবা মা ও তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন এক মহিলা। অভিযোগকারী মহিলা দাবি করেছেন যে তাঁর এবং বিধবা মহিলার ছেলের 'অনলাইনে সম্পর্ক' ছিল। এরপর 'ভিডিও কল'-এর মাধ্যমে বিয়ে করেন দুজনে। ওই বৃদ্ধা আবেদনে দাবি করেছেন, অভিযোগকারী মহিলার পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিয়ে শেষ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এই বিয়ে শেষ করার জন্য একটি চুক্তিও হয়েছিল। আর মহিলাকেও দেওয়া হয়েছিল ১১ লক্ষ টাকা। কিন্তু এরপর ওই মহিলা এখন বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে ধর্ষণ, আঘাত ও অপরাধমূলক ভয় দেখানোর মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নিম্ন আদালতে বৃদ্ধ বিধবা মহিলাা আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
ধর্ষণের অভিযোগকারী মহিলার অভিযোগ, বিধবা তাঁর ছোট ছেলেকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। এছাড়াও, ছবি তোলার পর তাঁকে জোর করে বন্দি করা হয় এবং মারধর করা হয়।
স্বস্তি পেলেন বৃদ্ধা মহিলা
শুনানির সময় বৃদ্ধার আইনজীবী যুক্তি দেন, ৩৭৫ ধারায় শুধুমাত্র একজন পুরুষকে ধর্ষণের মামলায় আসামি করা যায়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নোটিশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন চার সপ্তাহ পর এই মামলার শুনানি হবে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধ মহিলাকে গ্রেফতার থেকে রেহাই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ধারা ৩৭৫ কী?
IPC-এর ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এর সঙ্গে ৭টি পরিস্থিতিও উল্লেখ করা হয়েছে যখন যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়। যদি কোনও মহিলার সঙ্গে জোরপূর্বক, সম্মতি ছাড়া, ইচ্ছা ছাড়া, হুমকি দিয়ে, বিয়ের অজুহাতে বা মাদকদ্রব্য খাইয়ে যৌন মিলন করা হয় তবে তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের শাস্তির বিধান রয়েছে। ধর্ষণের মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে ন্যূনতম ১০ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।