উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ১৭ লাখ পড়ুয়ার স্বস্তি। এর আগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মাদ্রাসা আইনকে অসাংবিধানিক বলেছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট এদিন সেই রায় খারিজ করে দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে। দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে আরও জানানো হয়, সব মাদ্রাসা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সার্টিফিকেট দিতে পারবে, তবে এর বাইরে শিক্ষার সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষমতা মাদ্রাসার থাকবে না।
মঙ্গলবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত মাদ্রাসাগুলি শিক্ষার্থীদের কামিল এবং ফাজিল ডিগ্রি দিতে পারবে। কারণ তা ইউজিসি আইনের পরিপন্থী হবে। এই সিদ্ধান্তের অর্থ, উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসাগুলি চালু রাখার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকল না। রাজ্য সরকার শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করবে।
মাদ্রাসা বোর্ড কামিল নামে স্নাতক এবং ফাজিল নামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিয়ে থাকে। এর অধীনে ডিপ্লোমাও করা হয়, যাকে বলা হয় কারি। বোর্ড প্রতি বছর মুন্সী, মৌলভি (দশম শ্রেণী) ও আলিম (দ্বাদশ শ্রেণী) পরীক্ষাও পরিচালনা করে আসছে। তবে এবার থেকে কামিল ও ফাজিলের ডিগ্রি দিতে পারবে না উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসাগুলো।
মাদ্রাসা আইন নিয়ে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়েছে উত্তরপ্রদেশের ১৬ হাজার মাদ্রাসা। সেই রাজ্যে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২৩,৫০০। এর মধ্যে ১৬,৫১৩টি মাদ্রাসা স্বীকৃত।
গত ২২ অক্টোবর শুনানি শেষ করে সুপ্রিম কোর্ট তার সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করে। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি জানান, ফাজিল এবং কামিলের অধীনে ডিগ্রি দেওয়া রাজ্যের আওতার মধ্যে নয়। এটি ইউজিসি আইনের বিধান লঙ্ঘন করে।
কেন হাইকোর্ট মাদ্রাসা আইন বাতিল করেছিল?
মাদ্রাসা বোর্ড আইনের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করেছিলেন আংশুমান সিং রাঠোর নামে এক ব্যক্তি। রাঠোর এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। গত ২২ মার্চ হাইকোর্ট এই বিষয়ে রায় দেন। হাইকোর্ট বলেছিল, 'ইউপি বোর্ড অফ মাদ্রাসা শিক্ষা আইন ২০০৪ অসাংবিধানিক এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করেছে।' পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুদের সাধারণ স্কুলিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার।
মাদ্রাসা আইন কী? এই আইনটি উত্তর প্রদেশে ২০০৪ সালে করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচার ও প্রসার। এতে আরবি, উর্দু, ফারসি, ইসলামিক স্টাডিজ, দর্শনের মতো বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল।