বুলডোজার মামলায় কড়া মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের। আদালতের নির্দেশ, কোনও ব্যক্তি অভিযুক্ত বা দোষী হলেই তাঁর বাড়ি ভাঙা যাবে না। শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'নিজের ঘর, নিজের উঠোন আছে, এই স্বপ্নেই সবাই বেঁচে থাকে। ঘরের স্বপ্ন যেন কখনও হারিয়ে না যায়। এটাই সব মানুষের চাওয়া।'
বুলডোজার মামলার শুনানি হয় বিচারপতি বিআর গভই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে। বিচারপতিরা স্পষ্ট করে দেন, বুলডোজার চালানো বরদাস্ত করা হবে না। এই বিষয়ে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব কেউ দেখালে আদালত তা মেনে নেবে না। কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন না। শুনানি ছাড়া অভিযুক্তকে দোষী ঘোষণা করা যাবে না।
রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি গভই বলেন, 'নিজের বাড়ি থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মানুষের থাকে। বিখ্যাত হিন্দি কবি প্রদীপ এভাবেই বর্ণনা করেছেন। বাড়ির নিরাপত্তা হল একটি পরিবারের আশা।' আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, কোনও বাড়ি ভেঙে ফেলা মানে সেই পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া।
বুলডোজার মামলায়- কী করা যাবে, কী করা যাবে না? আদালত যা বলল...
১) কাউকে অভিযুক্ত করে বাড়ি ভাঙা যাবে না। রাষ্ট্র অভিযুক্ত বা দোষীর বিরুদ্ধে যথেচ্ছ ব্যবস্থা নিতে পারে না।
২) বুলডোজার অ্যাকশন একজনকে নয়, একাধিকজনকে শাস্তি দেয়। যা সংবিধানে অনুমোদিত নয়।
৩) সুষ্ঠু বিচার ছাড়া কাউকে দোষী করা যায় না।
৪) আইনের শাসন এবং আইনি ব্যবস্থায় গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। আইনের শাসন কখনও যা ইচ্ছে তা করার অনুমতি দেয় না।
৫) আসামি এমনকি দোষী সাব্যস্তদেরও ফৌজদারি আইনে সুরক্ষা দেওয়া হয়। কর্মকর্তা বা আধিকারিকদের সেই কথা মাথায় রাখতে হবে।
৬) সাংবিধানিক গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা আবশ্যক। একজন নাগরিক দোষী বা অভিযুক্ত হলেই তাঁর বাড়ি ভেঙে ফেলা যায় না।
৭) ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কর্মকর্তাদের রেহাই দেওয়া যাবে না। স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে কোনও বাড়ি ভেঙে ফেলা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে পৌরসভার আইন আগে দেখে নিতে হবে।
৮) অনুমতি ছাড়া বাড়ির যে অংশ নির্মাণ করা হয়েছে শুধুমাত্র সেই অংশই ভেঙে ফেলা যেতে পারে। বাড়ির অন্য অংশে হাত দেওয়া যাবে না।
৯) নোটিশে বুলডোজার চালানোর কারণ জানাতে হবে।
১০) গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ডিজিটাল পোর্টাল বানাতে হবে ৩ মাসের মধ্যে। ব্যক্তিগত শুনানির জন্য একটি তারিখ দিতে হবে।
১১) কেন বুলডোজার অ্যাকশন প্রয়োজন সেটাও উল্লেখ করতে হবে।
১২) যদি ভবনটি অবৈধভাবে ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১৩) পুলিশ ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভাঙনের ভিডিও রেকর্ডিং করা হবে। সেই প্রতিবেদনটি পোর্টালে প্রকাশ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বুলডোজার চালানোর ফলে নারী ও শিশুরাও ঘরছাড়া হচ্ছে। এটা কোনওভাবেই কাঙ্খিত নয়। বাড়ি বা আশ্রয়স্থল ভাঙার নোটিশ দিলে তা চ্যালেঞ্জ করার জন্য সময় দিতে হবে। বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে সরকারকে।