সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়ে ছিলেন ২৬ সপ্তাহের গর্ভবতী একবিবাহিত মহিলা । বুধবার সেই মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে মতান্তর দেখা দিল শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে। বিচারপতি হিমা কোহলি ব তাঁর বিচারবিভাগীয় বিবেকে ওই মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিতে চাননি। অন্যদিকে ভিন্ন মত প্রকাশ করে বিচারপতি বিভি নাগারথনা বলেন, ওই মহিলার সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে। কারণ, তিনি গর্ভাবস্থার অবসানের মধ্যে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ২৬ সপ্তাহে এক বিবাহিতা অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে। তার আগে শীর্ষ আদালত দিল্লির এইমস থেকে পাওয়া মহিলার মেডিক্যাল রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখে। সেখানে বলা হয়েছিল, গর্ভপাতে সমস্যা নেই। মহিলার প্রাণসংশয় হবে না। তার পরেই বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি নাগরত্নের বেঞ্চ অনুমতি দেয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার একটি আবেদন করে মঙ্গলবার। কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে বলেন, ‘এই নির্দেশ ফিরিয়ে নিক সুপ্রিম কোর্ট। কারণ এইমসের বোর্ড বলেছে, ওই ভ্রূণের জীবিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে তো চিকিৎসকদের ভ্রূণহত্যা করতে হবে। এইমসের এই রিপোর্ট সত্ত্বেও কোর্ট মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছে।’
এই আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ঐশ্বর্যকে বলেন, ‘রায় রিকল করার জন্য বুধবার আপনি আবেদন করুন। আমি তার পরে বেঞ্চ গঠন করব। দিল্লি এইমসকে অনুরোধ করছি, আপাতত গর্ভপাত না করাতে।’ স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের এ হেন পদক্ষেপে নানা গুঞ্জন উঠেছে। গত বছর শীর্ষ আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছিল, ‘গর্ভপাতের জন্য বিবাহিতা বা অবিবাহিতা মহিলার একক সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। তাঁর শরীরের অধিকার তাঁর নিজের, সে জন্য অন্য কারও অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
এদিন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সিদ্ধান্ত অবশ্য বিভক্ত। বিচারপতি হিমা কোহলি বলেছেন যে তার বিচার বিভাগীয় বিবেক একজন মহিলাকে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অনুমতি দিচ্ছে না। অন্যদিকে বিচারপতি বিবি নাগারথনা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বলেন যে মহিলার সিদ্ধান্তকে আমাদের সম্মান করা উচিত। এরসঙ্গে, ৯ অক্টোবরের আদেশ প্রত্যাহার করা উচিত কিনা তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চে কোন ঐকমত্য হয়নিই, যেখানে একজন বিবাহিত মহিলাকে ২৬ সপ্তাহে তার গর্ভাবস্থা শেষ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে গর্ভপাতের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত
সোমবার (৯ অক্টোবর) আদালত এইমসের চিকিৎসকদের প্যানেলকে ওই নারীর গর্ভপাতের নির্দেশ দেয়। যদিও পরে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বরিয়া ভাটির যুক্তির পর আদালত মহিলার গর্ভপাত প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ করে। তিনি আদালতকে বলেন, চিকিৎসকদের প্যানেল ভ্রূণ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, মামলাকারী ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মহিলার আগে দুই সন্তান রয়েছে। একাধিক অসুস্থতা রয়েছে তাঁর। আদালতকে জানান, তাঁর পক্ষে নতুন করে সন্তানপালন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, মাতৃত্বকালীন অবসাদে ভুগছেন মহিলা। সেই সূত্রে গর্ভপাতের আবেদন জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের ভিন্ন বেঞ্চ সেই অনুমতি মিলেছিল সোমবার। মঙ্গলবার ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। আর বুধবার বিবাহিত মহিলার গর্ভপাতের রায় দিতে গিয়ে মতান্তর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে।