মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে একটি গ্রাম রয়েছে, যেটি প্রেমের বিয়ের জন্য পরিচিত। গত চার দশকে জেলার গন্ডপিপরি তহসিলের করঞ্জি গ্রামে ২০০টিরও বেশি প্রেমের বিয়ে হয়েছে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধী দলের নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ারও এই গ্রামেরই বাসিন্দা। গ্রামবাসীদের অনেকেই জানান, তাঁদেরও প্রেম করেই বিয়ে হয়েছে। শুধু তাই নয়, খোদ গ্রামের প্রধান ও উপপ্রধান সহ ১১ সদস্যের গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ সদস্যের প্রেম করেই বিয়ে হয়েছে। বলা হচ্ছে, গত চার দশক ধরে এই গ্রামে প্রেমের বিয়ের প্রথা চালু, যা আজও চলছে। তন্ত মুক্ত সমিতি (বিরোধ মুক্ত কমিটি) এই গ্রামে সক্রিয় রয়েছে, যা গ্রামে উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ করে। এই কমিটির মাধ্যমে যিনি প্রেমের বিয়ে করতে চান তাঁকে গাইড করা হয়। পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে বলা হয়, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সম্মতির পর গ্রামের মন্দির বা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিয়ে হয়।
অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে
প্রথম দিকে এই গ্রামে প্রেমের বিয়ের বিরোধিতা থাকলেও এখন তা এখানে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই গ্রামে সব ধর্মের মানুষ বাস করে এবং বেশিরভাগ প্রেমের বিয়েই আন্তঃবর্ণের। গ্রামে বসবাসকারী প্রদীপ খোবরাগড়ে জানান যে তিনি যখন পড়াশোনা করছিলেন, তখন তিনি পাশের বাসিন্দা সুরেখার প্রেমে পড়েছিলেন এবং ১৯৯৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের আগে চার বছর ধরে চলে তাঁদের প্রেম। এখন দুই ছেলে রয়েছে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সুখী জীবনযাপন করছেন প্রদীপ।
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জানকী তেলকাপল্লিওয়ার জানান যে ২০১১ সালে তাঁর প্রেমের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছেন তিনি। একই গ্রামের পোহঙ্কর ও শ্রুতিরও বিয়ে হয় মাসখানেক আগে। দুজনে একে অপরকে দেখে প্রেমে পড়েন এবং তারপর বিয়ে করেন। একইভাবে গ্রামে এক বধির ও মূক দম্পতি আছে, তাঁদেরও প্রেমের বিয়ে হয়েছিল। তাঁরা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে একে অপরের প্রতি তাঁদের অনুভূতি এবং ভালবাসা প্রকাশ করেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে রয়েছে অটুট ভালবাসা।
পরিবারের সদস্যদের প্রেমের বিয়ের জন্য রাজি করানো হয়
গ্রামের তান্ত মুক্ত সমিতির (বিবাদ মুক্ত কমিটি) প্রাক্তন সভাপতি তুকেশ ওয়ানোদে বলেছেন যে ২০০৭ সালে মহারাষ্ট্র সরকার তন্তা মুক্ত সমিতি (বিরোধ মুক্ত কমিটি) গঠন করেছিল, যে সময়ে তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর আমলেই সবচেয়ে বেশি প্রেমের বিয়ে হয়েছে। যেসব দম্পতি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ভুল পদক্ষেপ নেন তাঁরা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়।
ভালবাসা দিবসে ভালবাসার বার্তা দিচ্ছে এই গ্রাম
গ্রামের সমীর নিমগাদে একজন গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য। তিনিও প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বিয়ের দশ বছর পূর্ণ করে আজ তিনি সুখী জীবনযাপন করছেন। এখনও পর্যন্ত এই গ্রামে পারিবারিক হিংসার একটিও মামলা থানায় নথিভুক্ত হয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে, এই পুরো গ্রামটি সমাজকে ভালবাসার এক অনন্য বার্তা দিচ্ছে।