বিদায় রতন টাটা। এক যুগের অবসান হল। বুধবার রাতে ৮৬ বছর বয়সে জীবনাবসান দেশের আইকনের। বহু মানুষের কাছেই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন রতন টাটা। দীর্ঘ বর্ণময় জীবনে রতন টাটাকে নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। তালিকায় রয়েছে এক প্রতিশোধের গল্পও। অপমানের মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন শিল্প-বাণিজ্যে অন্যতম এই মহীরূহ। ফোর্ড মোটরসের চেয়ারম্যানকে সবক শিখিয়েছিলেন তিনি। অপমানের বদলা নিয়েছিলেন রতন।
ঠিক কী ঘটেছিল?
নয়ের দশকের কথা। সেই সময় রতন টাটার নেতৃত্বে টাটা ইন্ডিকা গাড়ি চালু করেছিল টাটা মোটরস। সেই সময় টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদে রতন। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী টাটার গাড়ি বিক্রি হচ্ছিল না। যে কারণে সেই সময় আমেরিকার গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফোর্ড মোটরসের কথা বলেন তিনি।
অপমানিত হন রতন টাটা
ফোর্ড মোটরসকে প্যাসেঞ্জার কার বিজনেস বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রতন। যা নিয়ে রতনকে অপমান করেছিলেন ফোর্ড মোটরসের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড। বলেছিলেন, 'আপনি কিছুই জানেন না। কেন প্যাসেঞ্জার কার ডিভিশন চালু করলেন? যদি আমি এই ডিল করি, তা হলে আপনার প্রতি দয়া করা হবে।'
ফোর্ড চেয়ারম্যানের এই কথাগুলো রতনের বুকে তীরের মতো বেঁধেছিল। তবে একটাও কথা বলেননি তিনি। বরং নম্রভাবে ফোর্ডের কথাগুলো শুনেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে মনে মনে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আমেরিকায় অপমানিত হওয়ার পর কার ডিভিশন বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। পরে বিল ফোর্ডকে সবক শেখান।
বদলা নেন রতন
অপমানের বদলা নিয়েছিলেন রতন টাটা। অপমানিত হওয়ার পর সেই রাতেই মুম্বই ফেরেন। তবে দমে যাননি। বরং কীভাবে কার ডিভিশনের স্বপ্ন পূরণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন টাটা। কঠোর পরিশ্রমের পর ৯ বছর বাদে ২০০৮ সালে বিশ্ব বাজারে ছাপ ফেলে টাটা মোটরস। বেস্ট সেলিং বিভাগের শীর্ষে জায়গা করে নেয় সংস্থার গাড়ি।
সেই সময় ফোর্ড মোটরসের হাল খারাপ হয়েছিল। তবে অপমানিত হলেও ফোর্ড মোটরসের দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রতন। ২০০৮ সালে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েন বিল ফোর্ড। সেই সময় জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার গাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন টাটা চেয়ারম্যান। তবে এজন্য তিনি আর আমেরিকা যাননি। যে বিল ফোর্ড তাঁকে অপমান করেছিলেন, সেই তাঁকেই মুম্বই আসতে হয়েছিল।
সেই সময় রতন টাটার কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছিলেন বিল ফোর্ড। রতনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভার কিনে আমাদের খুব উপকার করলেন।' আর এভাবেই কাজের মাধ্যমে অপমানের বদলা নিয়েছিলেন রতন টাটা। যা এক অনুপ্রেরণাই বটে।