scorecardresearch
 

India Population : ভারতেও হঠাত্‍ উঠছে সন্তান বৃদ্ধির আবেদন, কেন?

ভারতের জনসংখ্যা নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন ওঠে। জনসংখ্যা কমানোর পক্ষে কথা বলেন অনেকে। তবে ইদানিং দক্ষিণ ভারতের দুই মুখ্যমন্ত্রী জনসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন।

Advertisement
India Population India Population
হাইলাইটস
  • দক্ষিণ ভারতে কেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির আবেদন করা হচ্ছে ?
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির আবেদনের পিছনে কারণটা কী ?

ভারতের জনসংখ্যা নিয়ে এমনিতেই প্রশ্ন ওঠে। জনসংখ্যা কমানোর পক্ষে কথা বলেন অনেকে। তবে ইদানিং দক্ষিণ ভারতের দুই মুখ্যমন্ত্রী জনসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা আরও বেশি করে সন্তান উৎপাদনের আবেদন জানিয়েছেন। 

প্রথম আবেদন করেছিলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি বলেন, দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশে প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর দাবি দেশে ফার্টিলিটির হার ২.১। সেখানে অন্ধ্রে ১.৬। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৭ সালের মধ্যে সেই রাজ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিনি এও জানান, সরকার শীঘ্রই নতুন আইন আনছে। যাদের দুইয়ের বেশি সন্তান থাকবে তারাই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। 

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে নতুন দম্পতিদের ১৬টি করে সন্তান নেওয়ার আবেদন জানান। তিনি জানান, তামিলনাড়ুর জনসংখ্যা কমছে। এতে লোকসভার আসনগুলো প্রভাবিত হবে। 

আরও পড়ুন

কিন্তু কী এমন ঘটনা ঘটল যে, দক্ষিণের রাজ্যগুলি দুই সন্তান নীতি থেকে সরে আসছে? এর নেপথ্যে আছে উদ্বেগ ও রাজনীতি। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক উদ্বেগের দিকটি। ভারতে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়স্কদের যুবক বিবেচনা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের 'ইয়ুথ ইন ইন্ডিয়া ২০২২' অনুসারে, ২০২১ সালে ভারতের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশেরও বেশি যুবক ছিল। বয়স্কদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। তবে যুব জনসংখ্যা ২০৩১ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ এবং ২০৩৬ সালে ২২ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিপরীতে, প্রবীণদের জনসংখ্যা বাড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের জনসংখ্যা ছিল ১০ শতাংশ। ২০৩১ সালের মধ্যে তাদের জনসংখ্যা ১৩ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি পাবে। ২০৩৬ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি হবে।

বয়স্কদের জনসংখ্যায় দক্ষিণ বনাম উত্তর ভারত 

Advertisement

দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উত্তরের রাজ্যগুলির তুলনায় ধীর। ফলে এখানে বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ছে। কমছে যুবক-যুবতীর সংখ্যা। 

কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট দেখায় যে, ২০৩৬ সালের মধ্যে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বয়স্ক মানুষের জনসংখ্যা উত্তরের রাজ্যগুলির চেয়ে বেশি হবে। উদাহরণস্বরূপ, অন্ধ্রের জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ, কেরলে ২৩ শতাংশ, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় ১৭ এবং তামিলনাড়ুতে ২১ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি হবে৷ 

একই সময়ে, উত্তরের রাজ্যগুলি যেমন উত্তর প্রদেশে ১২ শতাংশ, বিহারে ১১ শতাংশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ১৩ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে ১২ শতাংশ এবং হরিয়ানায় ১৪ শতাংশ বয়স্ক হবে। 

কিন্তু কেন এমন? স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে যখন প্রথম আদমশুমারি হয় তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৩৬ কোটির কাছাকাছি। ১৯৭১ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ৫৫ কোটিতে পৌঁছয়। তাই ৭০-এর দশকে সরকার পরিবার পরিকল্পনার ওপর জোর দেয়। দক্ষিণের রাজ্যগুলি তা গ্রহণ করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু, উত্তরের রাজ্যগুলিতে তা হয়নি। তাতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সময়, দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, তারা পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে ঠিকই তবে এতে ভবিষ্যতে অসুবিধে হবে। রাজ্যে লোকসভা আসন কমে যাবে। আসন কম মানে সংসদে কম প্রতিনিধিত্ব।

সেই কারণে বিরোধও হয়। ১৯৭৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২০০১ সাল পর্যন্ত কেবল ১৯৭১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে লোকসভা আসন থাকবে। কিন্তু ২০০২ সালে অটল সরকার আবার ২০২৬ পর্যন্ত তার সীমা সংশোধন করে।

এর পেছনে রাজনৈতিক অঙ্কটা কী? 

আসলে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার জন্য একজন এমপি থাকা উচিত। যদিও ১৯৭১ সাল থেকে লোকসভা আসনের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। সীমাবদ্ধতা থাকলে জনসংখ্যা কম এমন রাজ্যে আসন সংখ্যা কম হবে। অন্যদিকে, যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেড়েছে, সেখানে আসন সংখ্যাও বাড়বে। বর্তমানে তামিলনাড়ুর আনুমানিক জনসংখ্যা ৭.৭০ কোটি। সেখানে ৩৯টি লোকসভা আসন রয়েছে। যেখানে, মধ্যপ্রদেশের জনসংখ্যা ৮.৭৬ কোটি এবং লোকসভা আসন রয়েছে ২৯টি। যদি সীমাবদ্ধতা থাকত তাহলে বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে ৮৭ টি এবং তামিলনাড়ুতে ৭৭ টি  লোকসভা আসন থাকত। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার জন্য একজন সাংসদ  ফর্মুলা অনুযায়ী এই আসন সংখ্যা। 

এখানেই আপত্তি দক্ষিণের রাজ্যগুলির। তারা বলে আসছে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি তাদের তরফে মানা হয়েছে। কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তাদের লোকসংখ্যা কমে যাবে। এতে আসনও কমতে পারে। 
 

Advertisement