শুরু হতে চলেছে অম্বুবাচী (Ambubachi)। হিন্দুধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক উৎসব এই অম্বুবাচী। ভারতের একাধিক স্থানে অম্বুবাচী উৎসব, রজঃউৎসব নামেও পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, ঋতুকালে মেয়েরা অশুচি থাকেন। হিন্দু শাস্ত্রে ও বেদে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। একই ভাবে মনে করা হয় পৃথিবীও এই সময়কালে অশুচি থাকে। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শাস্ত্রের নানা কাহিনি।
অম্বুবাচী তিন দিন ব্রহ্মচারী, সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ এবং বিধবা মহিলারা 'অশুচি' পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না করে কিছু খান না। অম্বুবাচী চলাকালীন সমস্ত সতীপীঠ সহ বিভিন্ন মন্দির ও বাড়ির ঠাকুর ঘরের মাতৃ শক্তি যেমন কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, বিপত্তারিণী,শীতলা, চণ্ডীর প্রতিমা বা ছবি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তবে তারাপীঠ মন্দির এই সময় খোলা থাকে।
অম্বুবাচীতে খোলা থাকে তারাপীঠ মন্দির (Tarapith Mandir Remains Open During Ambubachi)
অম্বুবাচীর সময়ে বছরের অন্যান্য দিনের মতোই তারাপীঠ মন্দিরে (Tarapith Temple) চলে মা তারার (Maa Tara) পুজো। এমনকী ভক্তদের জন্যেও খোলা থাকে মন্দিরের দ্বার। অনেকে ভুল করলেও, আসলে তারাপীঠ সতীপীঠ নয়। এটি একটি সাধনা স্থল বা সাধন ক্ষেত্রে বলে মনে করা হয়। এজন্যে পুরাকাল থেকে তারাপীঠ মন্দির অম্বুবাচীর সময়ও খোলা থাকে এবং নিত্য পুজো, ভোগ, আরতি সমস্ত কিছুই হয়।
পৌরাণিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। মনে করা হয়, আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থ পদে ঋতুমতী হন ধরিত্রী। পূর্ণ বয়স্কা ঋতুমতী নারীরাই কেবল সন্তান ধারণে সক্ষম হন। তাই অম্বুবাচীর পর ধরিত্রীও শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠেন। এই অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতী বলেও পরিচিত।
সতীপিঠের অন্যতম অসমের কামাক্ষ্যা মন্দিরে সতীর গর্ভ এবং যোনি পড়েছিল। তন্ত্র সাধনার অন্যতম পীঠ এই মন্দির। প্রতি বছর অম্বুবাচীর তিন দিন কামাক্ষ্যা মন্দিরে বিশেষ উৎসব এবং মহামেলার আয়োজন হয়। এই সময় কামাক্ষ্যার মন্দির বন্ধ থাকার রীতি রয়েছে। তবে চতুর্থ দিনে সর্বসাধারণের ভক্তকুলের জন্য মন্দিরের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। দেশ- বিদেশ থেকে ভক্তেরা ভিড় জমান মন্দিরে।
অম্বুবাচীর নিয়মকানুন (Ambubachi Rules)
অম্বুবাচীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু আচার অনুষ্ঠান। বিশ্বাস করা হয় যে, এগুলি মেনে চললে সংসারের মঙ্গল হয়।
* এই তিনদিন সন্ন্যাসী এবং বিধবারা বিশেষ ভাবে পালন করেন। কোনও শুভ কাজও এই কয়েকদিন নিষিদ্ধ থাকে।
* শুধু তাই নয়, অম্বুবাচী চলাকালীন কৃষিকাজ বন্ধ রাখা হয়। অম্বুবাচীর তিনদিন পর, ফের কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান ও চাষাবাদ শুরু হয়।
* অম্বুবাচী চলাকালীন পুজো করার সময়ে মন্ত্রপাঠ করা উচিত না। শুধুমাত্র ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করতে হয়।
* অম্বুবাচীর পর দেবীর মূর্তি বা ছবিতে দেওয়া আচ্ছাদন খুলে নিতে ভুলবেন না। এরপর সেই দেবীমূর্তি ভাল করে স্নান করিয়ে পুজো করবেন। অম্বুবাচী শেষ হলে দেবীকে আম এবং দুধ নিবেদন করা শুভ।
* তবে অম্বুবাচীতে গুরুপুজো করতে কোনও বাধা নেই। এমনকি গুরু প্রদত্ত মন্ত্রও অনায়াসে জপ করতে পারবেন।
* এই সময়ে তুলসি গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করবেন। এছাড়া যাঁরা শাক্তমন্ত্রে দীক্ষিত, তাঁরা জপ করতে পারবেন।
* অম্বুবাচীর সময়কালে সৌভাগ্যকুণ্ডের ধারে গণেশ বিগ্রহ দর্শন করে ও নিষ্ঠা করে পুজো করলে শুভ ফল মেলে। সেই সঙ্গে বিধিপূর্বক অগ্নিস্থাপন করে নিজ ইষ্ট মন্ত্রে হোম করুন। এতে সংসারে মঙ্গল হবে।
অম্বুবাচী ২০২৩-তে শুরু ও শেষের দিনক্ষণ (Ambubachi 2023 Date- Time)
অম্বুবাচী শুরুর পর তিন দিন চলে এই উৎসব। চলতি বছর অম্বুবাচী প্রবৃত্তিঃ অর্থাৎ শুরু হবে ২২ জুন অর্থাৎ ৬ আষাঢ় রাত ঘ ২.৩২ গতে এবং ২৬ জুন অর্থাৎ ১০ আষাঢ় দিবা ঘ ২।৫৬ গতে এর নিবৃত্তিঃ অর্থাৎ সমাপ্তি হবে।