চারপাশে এ এক অস্থির সময়। তার মধ্যেই বাপের বাড়ি আসছেন মা দুর্গা। আমাদের সমাজে নারীরা কতটা নিরাপদ, এই প্রশ্নের মধ্যেই নারীশক্তির আরাধনার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। শহরজুড়ে প্যান্ডেল তৈরির প্রস্তুতি দেখা গেলেও সেভাবে দুর্গাপুজো নিয়ে প্রতিবছরের মতো উত্তেজনা আর নেই। আগামী মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু হবে দুর্গাপুজো। তার আগে ২ অক্টোবর মহালয়া, দেবীপক্ষের শুরু। দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত আছে। দেবী দুর্গা ও তাঁর পুত্র-কন্যার নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করে মর্তলোকে সারা বছর কেমন কাটবে। প্রতি বছর দুর্গার আগমন ও প্রস্থান সাধারণত একই বাহনে হয় না। যদি কোনও বছর হয়‚ তবে তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এই বছর দুর্গার আসা ও যাওয়া দুটি ভিন্ন বাহনে হবে।
মা দুর্গার বিভিন্ন বাহন
পঞ্জিকা অনুসারে পুজোর সপ্তমীতে দেবীর আগমন হয়, আর গমন হয় দশমীতে। এই দুই দিন সপ্তাহের কোন কোন বারে পড়ছে, তার উপরেই নির্ভর করে দেবীর আসা-যাওয়ার গমন।শাস্ত্র অনুযায়ী সপ্তমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন হবে গজ বা হাতি। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবীর বাহন ঘোটক বা ঘোড়া। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। সপ্তমী বুধবার হলে দেবীর বাহন নৌকা। একই ভাবে, দশমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন গজ। দশমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দশমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর গমন হবে দোলা বা পালকিতে। আর দশমী বুধবার হলে দেবীর নৌকায় করে কৈলাশে ফিরবেন দেবী।
এই বছর দুর্গার বাহন
এই বছর ১০ অক্টোবর সপ্তমী পড়েছে বৃহস্পতিবার। তাই দুর্গার আগমন দোলা বা পালকিতে। আগামী ১৩ অক্টোবর রবিবার পড়েছে বিজয়া দশমী। মা দুর্গা পুত্র-কন্যা নিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন গজ বা হাতির পিঠে আসীন হয়ে। শাস্ত্রমতে, দুর্গা যদি পালকিতে করে আসেন, তাহলে ফল "দোলায়াং মকরং ভবেৎ" অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। দেবী ফিরবেন গজ বা হাতিতে, শাস্ত্র মতে যা দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্তলোকের অধিবাসীগণ। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ।
দুর্গার অন্য বাহনগুলির গুরুত্ব
দেবী যদি ঘোড়ায় চড়ে আসেন বা বিদায় নেন তবে তার ফল "ছত্র ভঙ্গ স্তুরঙ্গমে" অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় 'ছত্রভঙ্গম'। দেবীর আসা বা যাওয়া নৌকায় হলে ফল "শস্য বুদ্ধিস্তথাজলম" অর্থাৎ প্রবল বন্যা ও খরা দেখা যায়। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া সূচিত হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতি বর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।