গাঢ় নীল রং। মা কালীর মূর্তি যেন গগন ছুঁয়েছে। সুদীর্ঘ এহেন কালী প্রতিমা যুগ যুগ ধরে পূজিত হয়ে আসছে কলকাতায়। যা ফাটাকেষ্টর পুজো নামেই পরিচিত। বছরের পর বছর ধরে ফাটাকেষ্টর কালীপুজো নজর কাড়ছে। আজও এই পুজো ঘিরে জনমানসে উৎসাহ বিন্দুমাত্র কমেনি।
উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট ধরে একটু এগোলেই কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়া। সেখানই এক গলির ভিতরে প্রতিবছর পুজো হয়। ১২১, সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট বাটার কাছে ঠিকানা এই কালীপুজোর। যা এখন নব যুবক সঙ্ঘ নামেই পরিচিত। তবে এই নামে খুব একটা পরিচিতি নেই। বরং 'ফাটাকেষ্টর পুজো' নামেই বহুল জনপ্রিয়।
ফাটাকেষ্টর পুজো ছাড়া কলকাতার কালী পুজো প্রায় অসম্পূর্ণই বলা চলে। কিন্তু কে এই ফাটাকেষ্ট? ২০০৬ সালে স্বপন সাহার পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল সুপারহিট সিনেমা 'এমএলএ ফাটাকেষ্ট'। পর্দায় ফাটাকেষ্টের ভূমিকায় মিঠুন চক্রবর্তীর সেই 'মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে' সংলাপ আজও জনপ্রিয়। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালনের ভূমিকায় সেলুলয়েডে রাজ করেছিলেন ফাটাকেষ্ট। তবে বাস্তবের ফাটাকেষ্ট কিন্তু আলাদা।
শোনা যায়, ফাটাকেষ্ট ছিলেন কলকাতার প্রথম ডন। দাপুটে লোক ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্ট। একসময় প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের পুজোর সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ চলত ফাটাকেষ্টর পুজোর। সেই সময় ফাটাকেষ্টর পুজোর আলাদা মেজাজ ছিল। তবে ১৯৯২ সালে তাল কাটে। সে বছর প্রয়াত হন ফাটাকেষ্ট। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরও রমরমিয়ে পুজো হয়ে আসছে। এখনও একইরকম জনপ্রিয় ফাটাকেষ্টর পুজো।
একসময় ফাটাকেষ্টর পুজোয় রীতিমতো চাঁদের হাট বসত। পুজোয় যেতেন অমিতাভ বচ্চন, বিনোদ খন্না, আশা ভোঁসলে, আরডি বর্মনের মতো তারকারা। তবে সেই তারকা দ্যুতি হয়তো নেই এখন। কিন্তু ফাটাকেষ্টর কালীপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান বহু মানুষ।
কথিত রয়েছে, কুমোরটুলি থেকে ফাটাকেষ্টর প্রতিমা না বেরোলে, কোনও প্রতিমাই বার করা হয় না। রীতিমতো শোভাযাত্রা করে কুমোরটুলি থেকে ফাটাকেষ্টর কালী প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয়, ফাটাকেষ্টর কালী মা খুবই জাগ্রত। ভক্তিভরে পুজো করলে মনস্কামনা পূরণ করেন মা। আর সেই কারণেই প্রতি বছর ফাটাকেষ্টর পুজোয় ভক্ত সমাগম হয়।