আর কিছুদিন পরেই শুরু হয়ে যাবে দীপাবলির উৎসব। আর এই উৎসব শুরু হয় ধনতেরাসের মাধ্যমে। ২৯ অক্টোবর উদযাপন করা হবে ধনতেরাস। যা ‘ধনত্রয়োদশী’ বা ‘ধনবত্রী ত্রয়োদশী’ নামেও পরিচিত। হিন্দু শাস্ত্র মতে কার্তিক মাসের তেরোতম দিনে, অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ তিথিতে গোটা বিশ্ব জুড়েই পালিত হয় উৎসব। এইদিন সোনা-রূপোর গয়না, বাসনপত্র সহ নতুন কিছু বাড়িতে নিয়ে আসার চল রয়েছে। তবে ভারতীয় মহাকাব্য ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি তাঁর এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করা ভিডিওতে বলেছেন যে এই ধনতেরসের কোনও শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই।
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি তাঁর ইউটিউবে পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেন, 'ধনতেরাস ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে, আমাদের ছোটোবেলায় কোনও ধনতেরস দেখিনি। তেরাস শব্দের অর্থ আমি জানি না, নিশ্চয়ই খুব ভাল অর্থ আছে এর। তবে আমার কাছে নিজের মতো করে একটা অর্থ লাগে, এই তেরাস যেন ত্রাস, ধনত্রাস যেন বলে মনে হয়। কেননা এর কোনও শাস্ত্রীয় ভিত্তি আমি দেখিনি।' তিনি আরও বলেন, 'ধন্বন্তরীর যে পুজোর কথা বলা হয়, সেটা বোকা বোকা বলা হয়। কারণ ধন্বন্তরী একজন বৈদ্য, যাঁর সঙ্গে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের যোগ আছে, যিনি অমৃত নিয়ে উঠেছিলেন, এই সমস্ত হেলথ কেয়ারের ব্যাপার থেকে হঠাৎ করে টাকা-পয়সার ব্যাপারে চলে গেলাম যে গয়না একটা কিনতেই হবে। দেখুন যদি এমনি সোনা কেনেন তা ভাল কথা তার জন্য এই ত্রাস তৈরি করার প্রয়োজন নেই, যে না কিনলে পরে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। এটা একটা আধুনিক ব্যাপার, এটাকে শুধুই বিজনেস শ্যুট বলেই মনে হয়।'
যদিও এই দেশে ধনতেরাস নিয়ে রীতিমতো উৎসব পালন করা হয়। অবাঙালিদের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন থাকলেও এখন বেশ কয়েক বছরে বাঙালিদের মধ্যেও এই ধনতেরাসে নতুন জিনিস কেনার হিড়িক দেখা গিয়েছে। এই সময় চারিদিকে কেবল আলোর রোশনাই। পরিবারের সকলে মঙ্গল, সুখ-সমৃদ্ধি ও ধনসম্পদ লাভের আশায় ধনদেবতা কুবেরের আরাধনা করেন এই দিন। মূল্যবান ধাতু , সোনা, বাসনপত্র এবং নতুন পোশাক কেনার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এই দিন অনেকেই দেবী ধনলক্ষ্মীর আরাধনা করেন। মা লক্ষ্মী বাড়িতে অধিষ্ঠান করেন তাহলে গৃহস্থের ঘরে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ীদের কাছেও এই দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ধনতেরাসের পরের দিন নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত। এই দিন বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে মোট চোদ্দোটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হয়। সেই সঙ্গে চোদ্দো রকমের শাক খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে। আবার অলক্ষ্মী বিদায়ের প্রথাও রয়েছে কোথাও কোথাও। এরপর দীপাবলির রাতে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনা করা হয় শুভ শক্তির।