শ্রাবণ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে পালিত হয় নাগ পঞ্চমী। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে এদিন নাগদেবতা ও মা মনসার পুজো করা হয়। নাগ পঞ্চমীতে, ভগবান শিবের গলায় অলঙ্কার আকারে উপস্থিত নাগ দেবতাকে পুজো করা হয়। এই শুভ দিনে নিষ্ঠা করে পুজো করলে আধ্যাত্মিক শক্তি, প্রচুর সম্পদ এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। কুণ্ডলীতে রাহু- কেতুর অবস্থান ভাল না হলে, এদিন বিশেষ পুজো করলে উপকার পাওয়া যায়। এবছর ৯ অগাস্ট অর্থাৎ নাগ পঞ্চমী পড়েছে।
জ্যোতিষী কমল নন্দলালের মতে, নাগ পঞ্চমীর দিন কালসর্প দোষ ও আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কালসর্প দোষ জ্যোতিষশাস্ত্রে বর্ণিত সবচেয়ে বিপজ্জনক দোষগুলির মধ্যে একটি। কালসর্প দোষের অপর নাম পাশ দোষ। এই জন্মে ব্যক্তির পূর্বজন্মের কর্ম এবং তার মৃত্যুর প্রকৃতি অনুসারে এই দোষ গঠিত হয়। এই দোষটি মূলত রাহুর কারণে গঠিত হয়, কারণ রাহু সর্পের সঙ্গে সম্পর্কিত। জ্যোতিষশাস্ত্রের সংজ্ঞা অনুসারে, রাহু বা কেতু যখন কোনও ব্যক্তির জন্ম কুণ্ডলিতে চন্দ্র বা শুক্রের সঙ্গে প্রথম স্থানে থাকে, তখন সেই ব্যক্তির জীবনে নাগ দোষ গঠিত হয়। জানুন, নাগ পঞ্চমীর দিনে কী কী প্রতিকার সম্ভব।
নাগ পঞ্চমীর দিন করুন কালসর্প দোষের প্রতিকার
* যদি কোনও ব্যক্তির কুণ্ডলীতে কালসর্প দোষ থাকে, তবে নাগ পঞ্চমীর দিন একজোড়া রুপোর সাপ নিয়ে তাদের পুজো করুন এবং নদীতে প্রবাহিত করুন। এতে কালসর্প দোষের প্রভাব কমে যায়।
* কালসর্প দোষ থেকে পরিত্রাণ পেতে, নাগ পঞ্চমীর দিন যে কোনও শিব মন্দিরে ভোলেনাথের সেবা করুন এবং এদিন মন্দির পরিষ্কারের কাজও করুন।
* নাগ পঞ্চমীর দিন নিষ্ঠা করে ভগবান শিবের পুজা করুন এবং সেই সময়ে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করুন। এছাড়াও, এদিন গঙ্গাজলে কালো তিল মিশিয়ে ভগবান শিবের অভিষেক করুন।
নাগ পঞ্চমীর গুরুত্ব
সনাতন ধর্মে সাপকে দেবতা রূপে পুজো করা করা হয়। ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণুও শেষনাগের উপর বসেন। এছাড়াও, দেবাদিদেব শিবও অলঙ্কার হিসেবে গলায় সাপ পরিধান করেন। ভগবদ গীতায় নয় ধরনের সাপের কথা বলা হয়েছে, যাদের পুজো করা অত্যন্ত শুভ। পৌরাণিক মুনি- ঋষিরা অনেক ধরনের উপবাস ও পুজা করতেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, নাগপঞ্চমীর দিন ভগবান শিবের আরাধনা এবং রুদ্রবিষেকের পর নাগ দেবতার পুজো করলে কালসর্প দোষ জীবন থেকে শেষ হয় এবং রাহু ও কেতুর অশুভতা দূর হয়।
নাগ পঞ্চমী পুজো পদ্ধতি
ভোরবেলা স্নান করে ভোলেনাথের পুজো করুন। মহাদেবকে বেল পাতা ও জল দিয়ে অভিষেক করুন। এরপর শিবের গলায় জড়ানো সাপের পুজো করুন। সাপকে হলুদ চাল ও ফুল নিবেদন করুন। ছোলা, বাতাসা এবং কাঁচা দুধ নিবেদন করুন। বাড়ির মূল দরজায় গোবর বা কাদামাটি দিয়ে সাপের আকৃতি তৈরি করে পুজো করুন। বিশ্বাস করা হয় যে, বাড়ির মূল দরজায় সাপের আকৃতি তৈরি করলে আর্থিক লাভ হয়, এবং বাড়িতে আসা বিপর্যয়ও এড়ানো যায়।