হিন্দু ধর্মে পা ছোঁওয়ার পরম্পরা বহু পুরনো। এটা অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখানোর পদ্ধতি। ভক্তি ও সমর্পণের চিন্তা ভাবনা থেকে পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে থাকেন সবাই। পা ছুঁয়ে লোকেরা দেব-দেবী, সাধু, মহান মানুষ, গুরু ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয়। ভারতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরম্পরায় সাধু-সন্নাসী ও বড়দের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার চল বহু যুগ ধরে প্রচলিত রয়েছে। যদিও পুরাণে পা ছোঁয়ার কিছু বিশেষ নিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে কিছু লোকের ক্ষেত্রে পা ছোঁয়ার নিয়মের ওপর নিষেধ রয়েছে। যদি কেউ আপনার পা ছুঁয়ে থাকে বা আপনি কারো পা ছুঁয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন। শাস্ত্রে এই লোকদের পা স্পর্শ করাকে পাপ বলে মনে করা হয়েছে।
কুমারী মেয়ে
শাস্ত্র অনুসারে, কোনও ব্যক্তি কুমারী মেয়েদের দিয়ে পা ছোঁয়াতে পারবেন না। যদি কোনও কুমারী মেয়ে আপনার পা ছুঁতে চায় তবে তাকে আটকে দিন, নয়তো আপনার পাপ বাড়বে। কারণ কুমারী মেয়েদের মাতা রানির রূপ ভাবা হয়ে থাকে। বরং আপনাদেরই ছোট কন্যাশিশু ও কন্যাদের পা ছুঁয়ে তাদের আশীর্বাদ নেওয়া উচিত।
বউ-মেয়ে
কোনও বাবা যেন ভুলেও তাঁর মেয়েদের পা ছুঁতে না বলেন। মেয়েদেরও মনে রাখতে হবে যে তারাও যেন তার বাবার পা না ছোঁয়, এতে তার বাবারই পাপ বাড়বে। মেয়েদের দেবীর রূপ মানা হয়ে থাকে তাই তাদের দিয়ে পা ছোঁয়া সঠিক কাজ নয়। অপরদিকে শ্বশুর-শাশুড়িরও উচিত তাদের বউমাকে দিয়ে পা না ছোঁয়ানো, কারণ ঘরের বউকে লক্ষ্মী বলে মনে করা হয়।
মন্দিরে বড়দের পা ছোঁবেন না
মন্দিরে যদি আপনার সঙ্গে কোনও গুরুজন বা সম্মানীয় ব্যক্তির দেখা হয়, তবে মন্দিরেই আপনি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য পা ছুঁয়ে থাকেন। শাস্ত্র অনুসারে, মন্দিরে ভগবানের চেয়ে বড় আর কেউ হন না। আর মন্দিরে ভগবানের সামনে কারোর পা ছোঁয়া মন্দির ও ভগবানের অপমান করা হয় বলে মনে করা হয়। মন্দির বা পুজোর ঘরে পুজো করা কোনও ব্যক্তির পা ছোঁয়াও উচিত নয়। এতে দুজনেরই পাপ লাগে।
শুয়ে থাকা কোনও ব্যক্তির পা ছোঁয়া
যদি কোনও ব্যক্তি ঘুমোচ্ছেন বা শুয়ে রয়েছেন, ওই সময় তাঁর পা ছুঁতে নেই। বিশ্বাস করা হয় যে, সেই ব্যক্তির পা ছুঁলে তাঁর আয়ু কমে যায়। শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির পা ছুঁতে হয় বলে শাস্ত্রে বলা হয়েছে।
শশ্মান থেকে ফেরা ব্যক্তি পা ছুঁতে নেই
শশ্মানে বা শশ্মান ঘাট থেকে ফেরা ব্যক্তির পা ছুঁতে নেই। অন্তিম কাজ সেরে ফেরার পর ব্যক্তি অশুদ্ধ থাকেন সেই সময় তার পা ছুঁতে নেই। যখন সে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে যায় তখন আপনি তাঁর পা ছুঁতে পারবেন।
ভাইঝি-ভাগ্নি
বিশ্বাস করা হয় যে, ভাইঝি-ভাগ্নী যেন ভুলেও মামা-মামীর পা না ছোঁয়। শাস্ত্রে ভাইঝি-ভাগ্নীকে পুজনীয় বলে মানা হয়েছে। আর তাই যদি ভাইঝি ও ভাগ্নী যদি পা ছোঁয় তবে মামা-মামীর পাপ লাগতে পারে।