একবার কৈলাসে, দেবী পার্বতীকে রাম নামের মহিমা ব্যাখা করতে গিয়ে, ভগবান শিব এই শ্লোকটি বলেছিলেন...রাম রামেতি রমেতি, রাম রাম মনোরমে, সহস্রনাম তত্তুল্যনাম, রাম নাম বরণে। শ্রী রামের প্রশংসা স্বরূপ এই শ্লোক ভারতীয় জনগণের প্রাচীন পরম্পরার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। এই শ্লোক নিজেই সেই অর্থকে সামনে রাখে, যেখানে বলা হয়েছে যে সব জায়গাতেই রাম বিরাজ করেন। একদিকে যখন অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হচ্ছে এবং রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠাও হতে চলেছে, ঠিক সেই সময় এক বিশেষ সম্প্রদায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যাঁরা কেবল শ্রী রামকে নিজেদের আরাধ্য দেবতা বলেই মনে করেন না, বরং তাঁরা নিজেদেরকে রামের প্রেমিকা মনে করে রামকে ভালোবাসেন।
আর প্রেমের মধ্যে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দেখা হয় না। এই প্রেমের সম্পর্কে বাইরের সব ভেদাভেদ মিটে যায় আর থাকে শুধুই আত্মা ও পরমাত্মা। যেখানে এই দুই আত্মা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। যেরকম শিব ও পার্বতী মিলে অর্ধনারীশ্বর হয়ে যায় আর রাধার সঙ্গে কৃষ্ণ মিলে রাধাকৃষ্ণ হয়ে যায়। ইশ্বরকে প্রেমিকা বা সখীরূপে পুজো করার উদাহরণ অদিকাংশই কৃষ্ণভক্তিতে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু রামভক্তিতেও এই নজির দেখতে পাওয়া যায়। অযোধ্যার কনক ভবন মন্দিরে সেই বিশেষ সম্প্রদায় রয়েছেন, যেখানে তাঁরা রামকে তাঁদের ভালোবাসার মানুষ হিসাবে পুজো করেন।
কথিত আছে যে মা কৈকেয়ী এই স্বর্গ ভবন সীতাজিকে তাঁর রামের সঙ্গে বিয়ের পর প্রথমবার মুখ দেখে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। বনবাস যাওয়ার আগে শ্রী রাম ও সীতা এই কনক ভবনে থাকতেন। শ্রী রামকে ভালোবাসে যে সম্প্রদায় তাঁরা কনক ভবনে রামের আরাধনা করেষ শ্রী রামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে থাকা এই প্রেমী সম্প্রদায় রাম রসিক বলে পরিচিত। অযোধ্যার বাসিন্দা জনপ্রিয় লেখক যতীন্দ্র মিশ্র এই রাম রসিক সম্পর্কে খুব সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, রাম রসিক সুন্দরতম সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম। ভগবানের সঙ্গে তারা নিজেদের বিশেষ সম্পর্কের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছেন। তাদের ভগবানের পুজো করার পদ্ধতি সকলের চেয়ে আলাদা। এই সম্প্রদায়ের মানুষ রামকে প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে দেখে। এই সম্প্রদায়ের পুরুষ নিজেদের নারী হিসাবে দেখে ভগবানের পুজো করে থাকেন। শ্রীরামকে তাদের জামাইবাবু ও নিজেদের শ্যালিকা বলে মনে করে থাকে। আর রামের সঙ্গে ঠিক তাঁর প্রেমিকার মতোই আচরণ করে এই সম্প্রদায়। যখন রাম রসিক ভগবান রামের আরতি করে তো তারা মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখে।
রাম রসিক সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অযোধ্যার কনক ভবন মন্দিরে। যদিও লক্ষ্মণ কিলাতেও এদের উপস্থিতি রয়েছে। আচার্য পীঠ লক্ষ্মণ কিলা রসিক পুজোর প্রাচীনতম পীঠ। রেওয়া রাজ্যের দেওয়ান দীনবন্ধুর বিশেষ অনুরোধে ১৮৬৫ সালে আচার্য জীবরামের শিষ্য স্বামী যুগলন্যা শরণের পবিত্র স্থানে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
এই মন্দিরে ভগবান রাম শুধু দশেরার সময় অস্ত্র পরিধান করেন। দশেরার আগে এবং পরে, তিনি কেবল দেবী সীতার স্বামী। সে তার বন্ধুদের ভগ্নিপতি এবং জগতের কর্তা। রাম রসিক শুধু রাম পুজোই করেন না, ভক্তিভরে রামকে ভালবাসেন। এই সময় মন্দিরে বিয়ের গান গাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।