হিন্দু ধর্মে শ্রাবণ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রাবণকে বলা হয় দেবাদিদেব শিবের মাস। পুণ্যার্থীরা শ্রাবণের প্রতি সোমবার, শিবের জন্যে ব্রত পালন করেন। সাধারণত মাসভর চলে নানা ধর্মীয় রীতি পালন। শিব মন্দির ছাড়াও, বাড়িতে বাড়িতেও পুজো হয় মহাদেবের। দেশের ভিন্ন প্রান্তে মন্দিরে ভোলেবাবার মাথায় জল ঢালতে ভক্তদের সমাগম হয়। এবছর শ্রাবণ মাস শুরু হবে ১৭ জুলাই থেকে এবং শেষ হবে ১৭ অগাস্ট।
শ্রাবণ মাসে শিবকে সন্তুষ্ট করতে ভক্তরা কোনও ত্রুটি রাখেন না। উপবাস করে শিবের মাথায় গঙ্গার জল বা দুগ্ধ জল ঢালেন শিবভক্তেরা। বিশ্বাস করা হয়, এই মাসে ভক্তি মনে মহাদেবকে ডাকলে তিনি তুষ্ট হোন ও মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।
পুরাণ মতে শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থন ঘটেছিল। সেই সময় মহাদেব, হলাহল বিষ পান করেছিলেন। সেই সময় বিষের তেজে তার শরীর নীল হয়ে যায় বলাই শিবের আরেক নাম 'নীলকণ্ঠ'। সেই সময় দেবী পার্বতী তাঁর স্তন দুগ্ধ পান করিয়ে দেবাদিদেবের সমস্ত জ্বালা প্রশমন করেছিলেন। এই ভাবেই সৃষ্টির রক্ষা করেছিলেন মহাদেব, তাই তাকে সৃষ্টির রক্ষাকর্তা বলা হয়। শ্রাবণ মাসে এজন্যেই বিশেষভাবে পুজো করা হয়।
এবছর শ্রাবণ মাসে মোট চারটি সোমবার পড়েছে
* ২২ জুলাই (৬ শ্রাবণ) - প্রথম সোমবার
* ২৯ জুলাই (১৩ শ্রাবণ)- দ্বিতীয় সোমবার
* ৫ অগাস্ট (২০ শ্রাবণ)- তৃতীয় সোমবার
* ১২ অগাস্ট (২৭ শ্রাবণ) চতুর্থ সোমবার
শ্রাবণ মাসে পুজোর নিয়ম
* শ্রাবণ মাসের সোমবার উপবাস করে শিবের পুজো করা ভাল। উপবাস না করতে পারলে এদিন নিরামিষ খেতে হয়।
* ভক্তি মনে মহাদেবের পায়ে ফুল, বেলপাতা অর্পণ করে আরতি করলে জীবনে কোনওরকম বিপদ-আপদ আসবে না৷
* 'শ্রাবণ' শব্দের উৎস হয়েছে 'শ্রবণ' থেকে। তাই এই সময়কাল শুভ কথা শোনার মাস।
* প্রতি সোমবার স্নান করে শিবস্তোত্র পাঠ করলে তা অত্যন্ত শুভ।
* যারা রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে চান, শ্রাবণ মাস তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল সময়।
* এই মাসে স্ফটিক শিবলিঙ্গ স্থাপন করা শুভ ফলদায়ী বলে মনে করা হয়।
* শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার আরাধনার ফলে সমস্ত অশুভ শক্তি দূরে থাকে।
* শ্রাবণের প্রতি সোমবার মহাদেবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রোচ্চারণ করলে মনের শান্তি রক্ষার পাশাপাশি বিপদমুক্ত হওয়া যায়।
* ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা, কলকে প্রভৃতি ফুল শিবের প্রিয় বলে জানা যায়। তবে মহাদেব বেলপাতাতেই সবচেয়ে বেশি তুষ্ট হোন।
শ্রাবণ মাসে স্বামীর মঙ্গল কামনায় উপবাস করে থাকেন মহিলারা। তবে শুধু বিবাহিত মহিলা নয়, অবিবাহিত মহিলা এবং অনেক পুরুষও এই মাসে ব্রত পালন করেন নিষ্ঠা করে পুজো করেন ভোলেবাবার। মনে করা হয় এই পুজো যারা করেন তাদের সুখ- সমৃদ্ধি বজায় থাকার পাশাপাশি দাম্পত্য জীবন মধুর হয়।