scorecardresearch
 

Tarapith- Tara Maa Abirbhab Dibas: আজ তারার আবির্ভাব তিথি, তারাপীঠে মায়ের পুজো হচ্ছে পশ্চিম মুখে! থাকছে মহাভোগ

Tarapith: তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির ও মন্দির- সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র। হিন্দুদের বিশ্বাস, এই মন্দির ও শ্মশান অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। শুক্লা চতুর্দশীর দিনে প্রতি বছর তারাপীঠে তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি পালিত হয়।  

Advertisement
তারাপীঠে মা তারা তারাপীঠে মা তারা

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার রামপুরহাট শহরের কাছে অবস্থিত তারাপীঠ। তান্ত্রিক দেবী তারার মন্দির ও মন্দির- সংলগ্ন শ্মশানক্ষেত্রের জন্য বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র। হিন্দুদের বিশ্বাস, এই মন্দির ও শ্মশান অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। শুক্লা চতুর্দশীর দিনে প্রতি বছর তারাপীঠে তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি পালিত হয়।  

এবছর এই বিশেষ তিথি পড়েছে আজ, ৯ কার্তিক (ইং ২৭ অক্টোবর), শুক্রবার। দিনভর বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে তারাপীঠে। বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে সকাল থেকেই। চলছে কুমারী পুজো। কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। 

তারা মায়ের আবির্ভাবের অজানা কাহিনি 

আরও পড়ুন

এই আবির্ভাব তিথিতে তারা মাকে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বের করে এনে মন্দির প্রবেশ পথ সংলগ্ন 'বিরাম মঞ্চে', তার ছোট বোন মলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দির অভিমুখে পশ্চিম দিকে  মুখ করে বসিয়ে পুজো করা হয় । বীরভূম ঝাড়খন্ড লাগোয়া নানকার মৌজার মলুটি গ্রামের মা মৌলিক্ষা তারা মায়ের ছোট বোন। এদিন দুই বোনে মুখ দেখাদেখি হয়। এ নিয়েও এক কল্প কাহিনি প্রচলিত। 'নাটোরের খান , আর নানকার এর দিকে চান'। অর্থাৎ মা তারা নাটোরের রাণীর তৈরী মন্দিরে বসে সারা বছর ভোগ গ্রহণ করেন । আর বছরের এই একটি দিন নানকার রাজপাটে অবস্থিত মৌলিক্ষা মন্দিরের দিকে চেয়ে থাকেন ।

পাল রাজত্বের সময়ে জয়দত্ত সওদাগর মায়ের আদেশে দ্বারকা নদের ধারে মহাশশ্মানের শ্বেতশিমূল গাছের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নীচে মা তারার শিলামূর্তি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দিনটা ছিল শুক্লা চতুর্দশী তিথি। এর পর থেকে প্রতি বছর শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে তারাপীঠে মা তারার আবির্ভাব তিথি পালিত হয়ে আসছে। এদিন আবালবৃদ্ধবনিতা তারাপীঠের ঐ বিরাম মঞ্চে মা তারাকে শুধু স্পর্শ নয়, একেবারে জড়িয়ে ধরে মনোবাঞ্ছা নিবেদন করতে পারে। বিরাম মঞ্চে কোন কপাট দেওয়া দরজা নেই। চার দিকে খিলানের গাঁথনি। যে কেউ যখন খুশি যতবার ইচ্ছে তারা মাকে ছুঁতে পারে। 

Advertisement

তারা মায়ের আবির্ভাব তিথির রীতিনীতি 

শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে অতি ভোরে সেবায়েতরা তারা মাকে  স্থান করিয়ে  আরতি করেন। এরপর গর্ভগৃহ থেকে  মাকে এনে বারান্দা সংলগ্ন  বিরাম মঞ্চে পশ্চিম দিকে মুখ করে স্থাপন করেন। মন্দিরের গর্ভ গৃহে মা তারা সারা বছর উত্তর মুখী হয়ে বিরাজ করেন। এদিন তারা মায়ের গর্ভগৃহ খালি থাকে। শুধু বেদীর নীচে মায়ের রূপোর চরণ দুটি  দর্শন করা যায় – যা অন্য সময়ে চোখের আড়ালে থাকে।

মা তারার ভোগ 

মায়ের আবির্ভাব তিথিতে মায়ের কোন অন্ন ভোগ হয় না। মায়ের ছোট বোন মৌলিক্ষারও এদিন অন্ন ভোগ হয় না। রীতি অনুযায়ী এদিন মায়ের মধ্যাহ্নভোগ নিবেদিত হয় না। দিনভর মা ফল-মিষ্টিই খেয়ে থাকেন এবং মহাভোগ হয় রাত্রিবেলা। সকালে মঙ্গল আরতির পর লুচি, মিষ্টি,ফল দিয়ে শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে মায়ের ভোগ হয় খিচুড়ি ,পোলাও ,পাঁচ রকম ভাজা , মাছ ও মাংস নিবেদন করা হয় মহাভোগ।

পশ্চিম মুখে তারা মায়ের পুজোর আয়োজন 

সারা দিন মা পশ্চিম মুখী হয়ে অগণিত ভক্তকে স্পর্শ দিয়ে ধন্য করেন। মায়ের পশ্চিম মুখী অবস্থান করার সঙ্গে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। ১১০৮ সালে বা ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে মা তারার আবির্ভাব তিথিতে তান্ত্রিকেরা মায়ের পুজোর আয়োজন করছিলেন। সেই সময়েই মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে বসে আরাধনা করছিলেন। তান্ত্রিকেরা রাখরচন্দ্রের পুজো বন্ধ করে দেয়। রাজা তখন ক্ষুন্ন মনে দ্বারকা নদীর পশ্চিম পাড়ে ঘট স্থাপন করে মায়ের পুজো করে নিজের গ্রামে ফিরে যান। রাতে তান্ত্রিকদের প্রধান আনন্দনাথকে মা স্বপ্নে জানান যে, তাঁর ভক্ত রাখরচন্দ্র অভিমান করে ফিরে গেছেন। তাই প্রতি বছর আবির্ভাব তিথিতে মাকে জেন, পশ্চিম দিকে মুখ করে বসিয়ে পুজার্চনা করা হয়। সেই থেকে এই শুক্লা চতুর্দশীর আবির্ভাব তিথিতে মা তারা সারা দিন পশ্চিম মুখী অবস্থান করেন ।

সারা দিনে অগণিত ভক্তকে দর্শন দিয়ে সন্ধ্যেবেলায় মা নিজের গৃহে ফিরে আসেন। এই প্রত্যাবর্তন দেখতে হাজার হাজার মানুষ মন্দির চত্বরে ভিড় করেন। এসময়ে বিরাম মঞ্চে কোনও মানুষ উঠতে পারে না। সেবায়েতরা একে একে মায়ের বেশ খুলে ঝুড়ির মধ্যে ঢাকা দিয়ে ,লোকচক্ষুর আড়াল করে মন্দিরে নিয়ে আসেন মাকে। গর্ভগৃহে মা তারাকে পুনঃস্থাপন করে আবার স্থান করিয়ে আরতি করা হয় । 
 

Advertisement