আর মাত্র ৭ দিনের অপেক্ষা। তারপরই সরস্বতী পুজো। এই বছর সরস্বতী পুজো ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বাগদেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই সরস্বতী পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনিতে এই পুজোতে নিরামিষ খাওয়ার চল থাকলেও অনেক বাড়িতেই সরস্বতী পুজোয় জোড়া ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অনেকে আবার এইদিন ইলিশের বিয়েও দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেন এই রেওয়াজ বা চল সেটা অনেকেই জানেন না। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
জোড়া ইলিশের রীতি
এটা আসলে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি সরস্বতী পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই পদটি মূলত শ্রীপঞ্চমীর দিনে খাওয়ার রেওয়াজ। ওই একই দিনে সরস্বতী পুজো হয় বলে একই দিনে দু’টি পালিত হয়।
কী কী নিয়ম রয়েছে
এদিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নান করে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ইলিশ কিনতে যেতেন। গৃহকর্ত্রীরা রেকাবিতে ধান, দুব্বো, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সাজিয়ে রাখতেন। অনেকে একটি রুপোর টাকাও রাখতেন তার মধ্যে। এর পরে গৃহকর্তা জোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ঢোকার সময় উলুধ্বনি ) দেওয়া হত। একটি কুলোয় ইলিশ দুটো রাখা হত এর পরে। জোড়া ইলিশ বরণ লোকাচারের ক্ষেত্রে কোনও কোনও পরিবারে আস্ত বেগুনও রাখা হত। অনেক পরিবারে অবশ্য একটি ইলিশ মাছ রান্নার রেওয়াজও ছিল। সেক্ষেত্রে ইলিশের সঙ্গে শিলনোড়া রাখা হত।
জোড়া ইলিশ রান্না
বহু পরিবারে জোড়া ইলিশ বরণের সময় মুখে টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। যিনি মাছ কাটবেন, সাধারণত এই টাকাটি তার প্রাপ্য। কাঁচা হলুদ এবং কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করে এই ইলিশ রান্না করা হয়। এই ইলিশ রান্নার আবার বিশেষ নিয়ম রয়েছে। কাঁচা হলুদ ও কাঁচা সর্ষের তেল দিয়ে রান্না করতে হয় এই ইলিশ। জেনে নিন এই ইলিশের রেসিপি।
ইলিশ রান্নার রেসিপি
প্রথমে জোড়া ইলিশ বরণ করার পর রান্না করতে হয়। এক ফোড়ন দিয়ে এই রান্না হয়। অর্থাত্ ফোড়ন দিয়ে আনাজগুলি এক বারে দিয়ে দিতে হবে। তার পরে জল দিতে হয়। হলুদ বাটার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি কাঁচা অবস্থায়ই ঝোলে দিতে হয়। রান্নায় গুঁড়ো হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, ইত্যাদি দেওয়া বারণ। তবে কাঁচা লঙ্কার ঝাল খুশি মতো দেওয়া যায়।
মনে করা হয়, বাংলাদেশের বিক্রমপুরেই এই প্রথার প্রচলন। তারপরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়।