অতি সম্প্রতি 'সাংসদ রত্ন' পুরস্কার পেয়েছেন দেশের ১৩ জন সাংসদ। দুটি সংসদীয় কমিটিও দেওয়া হয়েছে এই পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৩ সাংসদের মধ্যে জনের মধ্যে বাংলার থেকে ছিলেন দু'জন; বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বহরমপুরের সাংসদ তথা কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। একই মঞ্চে বাংলার দুই সাংসদকে সম্মান গ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে একটি দাবি। নেটিজেনদের একাংশের দাবি, দিল্লিতে অধীর-সঙ্গতে 'সাংসদ রত্ন' পুরস্কার গ্রহণ করেছেন সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যে শুভেন্দুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। এই দাবির সঙ্গে ফের একবার বাম-কংগ্রেস-বিজেপি-আইএসএফের গোপন বোঝপড়ার তথ্যও ছাড়া করছে একাংশ। সুকান্ত মজুমদার যখন পুরস্কার গ্রহণ করছেন, তখন তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে অধীর চৌধুরীকে। এই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে বেশ কয়েকজন লিখেছেন, "দিল্লিতে সেরা সাংসদের পুরস্কার পাচ্ছে সুকান্ত। পাশে দাঁড়য়ে অধীর। এদিকে বাংলায় নৌসাদ ভাইজান খুলে আম শুভেন্দু দাদাইয়ের প্রশংসা করছে! রাম বাম কং আই এস এফ মিলে মিশে একাকার!" (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত)
এখন প্রশ্ন হল, অধীর চৌধুরী কি সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গ দিতে বা তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন? ছবিটির পিছনের গল্প কী? অন্যদিকে নওশাদ সিদ্দিকী কি আদৌ শুভেন্দুর প্রশংসা করেছেন?
ইন্ডিয়া টুডের ফ্যাক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে, ঘটনাগুলো ঘটলেও যে ভাবে তাঁর ব্যাখ্যা করা হয়েছে ফেসবুক পোস্টে, তেমনটা মোটেই ঘটেনি। ভুল ব্যাখ্যা-সহ দাবিগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।
কীভাবে এগোল অনুসন্ধান?
তদন্তের শুরুতে আমরা এই খবরের ভিডিয়ো প্রতিবেদন খোঁজার কাজ করি। ইউটিউবে 'সাংসদ রত্ন' সার্চ করলে একাধিক ভিডিয়ো আমাদের সামনে আসে। ২৫ মার্চ ANI News Official ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োতে আমরা দেখতে পাই, মঞ্চে উঠে প্রথমে পুরস্কার গ্রহণ করেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর খানিক পর মঞ্চে পুরস্কার নিতে ওঠেন সুকান্ত মজুমদার। আগে থেকেই মঞ্চে অধীর চৌধুরী ও পুরস্কারদাতার উদ্দেশ্যে তিনি নমস্কার করে সৌজন্য বিনিময় করেন। এরপর পুরস্কার গ্রহণ করেন। তখন বালুরঘাটের সাংসদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধীর চৌধুরী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাকি পুরস্কার প্রাপকরাও।
কেবল সুকান্ত মজুমদার নন, তাঁর পুরস্কার গ্রহণের পর যাঁরা যাঁরা মঞ্চে উঠেছিলেন, সব ক্ষেত্রেই অধীর চৌধুরী ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কেবল মাত্র সুকান্ত মজুমদার নয়, অন্যান্য পুরস্কার প্রাপকদেরও পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধীর চৌধুরী। কারণ তিনিও 'সাংসদ রত্নের' তালিকায় ছিলেন।
Honoured to have received the #SansadRatnaAward on behalf of the Standing Committee on Finance.
— Jayant Sinha (@jayantsinha) March 25, 2023
The committee's work has been recognised for strengthening the legislative framework.
Congratulations to all my Hon. colleagues, we will continue to contribute towards 🇮🇳's progress. pic.twitter.com/DR72lKsVS1
I consider myself extremely fortunate to have had the opportunity to serve the people of Andaman & Nicobar Islands. I dedicate this second Sansad Ratna Award to them. I shall continue to serve you sincerly. #SansadRatna #AndamanandNicobar pic.twitter.com/8AwuHMPnjR
— Kuldeep Rai Sharma (@KuldeepRSharma) March 27, 2023
ভাইরাল পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে যে, নওশাদ সিদ্দিকী নাকি শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এমন কোনও খবর আমরা পাইনি যেখানে সরাসরি এই দাবি করা হয়। ইন্টারনেটে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে Samachar Plus Bangla নামের চ্যানেলে দেওয়া আইএসএফ বিধায়কের একটি সাক্ষাৎকার আমাদের নজরে আসে। ওই সাক্ষাৎকারের ব়্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে নওশাদকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে অধীর চৌধুরী এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে যেকোনও একজনকে বেছে নিতে বলা হয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দুকে বেছে নেন তিনি। কালবিলম্ব না করে নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী মহাশয় বিরোধী দলনেতা হিসেবে যে লড়াইটা দিচ্ছেন দারুণ। আরও বেশি দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। যেখানে অন্যায় হবে, দল রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে তাঁর পৌঁছে যাওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। কারণ তাঁর উপর অনেক দায়িত্ব। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন তবে আরও বেশি করা দরকার।"
অর্থাৎ বিরোধী দলনেতা হিসেবে অধীর চৌধুরীর তুলনায় তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে এগিয়ে রাখলেও, রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে আরও কার্যকর হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। ওই সাক্ষাৎকারেই অন্য প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্রেরও সুখ্যাতি করতে শোনা গিয়েছে নওশাদ সিদ্দিকীকে।
ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম-কংগ্রেস-বিজেপি-আইএসএফের গোপন আঁতাত বোঝাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দাবি করা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর।
দিল্লিতে সেরা সাংসদের পুরস্কার পাচ্ছে সুকান্ত। পাশে দাঁড়য়ে অধীর। বাংলায় শুভেন্দুর প্রশংসা করছেন নওশাদ সিদ্দিকী। রাম বাম কংগ্রেস আইএসএফ মিলেমিশে একাকার!
সুকান্ত মজুমদারের মতোই অধীর চৌধুরীও সাংসদ রত্ন পুরস্কার পেয়েছেন। তাই তিনি অন্যাদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে অধীরের তুলনায় শুভেন্দু বেছে নেন নওশাদ সিদ্দিকী। তবে বিরোধী দলনেতাকে দায়িত্বও মনে করিয়ে দিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক।