গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বাংলায় নিজেদের আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ২৯ করতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। আর এই ফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে উন্মাদনা লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার আঁচ লক্ষ্য করা গেছে।
আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ফ্রি মোবাইল রিচার্জ সংক্রান্ত একটি পোস্ট। সেখানে একটি লিঙ্ক শেয়ার করে তাতে ক্লিক করতে বলে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য ২৮ দিনের ফ্রি মোবাইল রিচার্জের ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে রাজ্যবাসী তৃণমূলকে আগামীতে আরও বেশি করে ভোট দেয় এবং তৃণমূল বারবার সরকার গঠন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের ওয়ালে ‘https://westbengalfreerecharge.blogspot.com/’ লিঙ্কটি শেয়ার করে লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সমস্ত পশ্চিমবঙ্ ব্যবহারকারীদের জন্য* *₹239* এর 28 দিনটি *রিচার্জ ফ্রি* এর জন্য অপেক্ষা করছেि *2024 আরও বেশি সংখ্যক লোক নির্বাচনে TMC ভোট দিতে পারে* এবং বারবার *TMC সরকার* গঠিত হতে পারে। আমিও এ থেকে শিক্ষা নিয়েছি 28 দিনের Recharge হয়ে গেছে, আপনিও এখন নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে এটি করতে পারেন। 28 দিনের Free Recharge গ্রহণ করুন (Last Date - 29 Oct. 2024).” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল পোস্টটি ভুয়ো ও স্ক্যাম।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, ভাইরাল পোস্টটি সন্দেহজনক। কারণ সেখানে দাবি করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য ২৮ দিনের ফ্রি মোবাইল রিচার্জের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেখানে ব্যবহৃত লিঙ্কের লোগো হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখা যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকারের তরফে প্রদত্ত অন্য সকল প্রকল্পের সুবিধা গ্রাহকরা সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। সেই সকল ওয়েবসাইটের শেষে সাধারণত ‘gov.in’ থাকে। কিন্তু আমরা ভাইরাল পোস্টে প্রদত্ত লিঙ্কটি ভালো করে দেখলে বুঝতে পারি সেটি কোনও সরকারি সাইট নয়।
তৃতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কোনও ফ্রি রিচার্জ প্রদানের ঘোষণা করলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যগুলিতে প্রাকাশি হত। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাইনি। যা থেকে আন্দাজ করা যায় যে মুখ্যমন্ত্রী এহেন ঘোষণা করেছেন। আর এই তিনটি কারণ থেকে অনুমান করা যায় ভাইরাল পোস্টি ভুয়ো এবং প্রতারণামূলক হলেও হতে পারে।
তবে এবিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে আমরা ভাইরাল পোস্টে ব্যবহৃত লিঙ্কে ক্লিক করি। তখন আমরা দেখতে পাই ভাইরাল ওয়েবাসাইটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। এবং সেখানে রিচার্জ সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই। আর থেকে আমরা স্পষ্ট হয়ে যাই যে ভাইরাল পোস্টটি ভুয়ো।
তবে ভাইরাল পোস্ট সংক্রান্ত বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় আমরা এই সংক্রান্ত বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে এই লিঙ্ক ও পোস্টটিকে সম্পূর্ণ ভুয়ো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি লেখা হয়েছে যে, “সাইবার জালিয়াতরা এটা ছড়াচ্ছে।কেউ ভুলেও এই লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। সতর্ক থাকুন, জালিয়াতদের ফাঁদে পা দেবেন না।”
সতর্ক থাকুন
— West Bengal Police (@WBPolice) June 7, 2024
একটি লিঙ্ক গত কয়েকদিন ধরেই অনেকের কাছে যাচ্ছে। লিঙ্কটি হল http:https://t.co/i2PTAyfsA2। বলা হচ্ছে, লিঙ্কে ক্লিক করলেই নাকি বিনামূল্যে মোবাইল রিচার্জ হয়ে যাবে।এই লিঙ্কটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। সাইবার জালিয়াতরা এটা ছড়াচ্ছে।ভুলেও এই লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।..(১/২)
এই একই বিষয় নিয়ে আমরা কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলেও একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে এটিকে সাইবার জালিয়াতদের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং এই মেসেজ যে সব প্রতারকরা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
Beware of the website "https://t.co/e91BhlPfzM" claiming free mobile recharges. This is a Cyber Fraud. Do not click the link or you might face financial loss. Stay vigilant!
— DCP (Cyber Crime), Kolkata Police (@DCCyberKP) June 6, 2024
Legal action is being taken against miscreants circulating such messages. pic.twitter.com/HbGse0BytM
এর থেকে প্রমাণ হয় যে ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে এবং সেটির পিছনে রয়েছে আর্থিক প্রতারণার ফাঁদ।
পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য ২৮ দিনের ফ্রি মোবাইল রিচার্জের ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাইরাল পোস্টের দাবিটি মিথ্যে এবং সেটির পিছনে রয়েছে আর্থিক প্রতারণার ফাঁদ।