গত ১০ জুলাই রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই চারটি আসনের মধ্যে সকলের নজর কেড়েছে বনগাঁর বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রটি। কারণ সেখানে দলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুরকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। যিনি আবার সম্পর্কে বনগাঁর বিজেপি সংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের খুড়তুতো বোন।
এই চার কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হবে আগামী শনিবার। আর সেখানে যে কেউ জয়ী হতে পারে। তবে নির্বাচন শেষ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বাগদা কেন্দ্রের ফলাফল সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিনের লোলো লাগানো একটি নিউজ কার্ড ভাইরাল হয়েছে। সেই নিউজ কার্ডের শিরোনামে লেখা হয়েছে, “বাগদার নতুন বিধায়ক হচ্ছে মধুপর্ণা ঠাকুর, বলছে সমীক্ষা।” অর্থাৎ নিউজ কার্ডটির মাধ্যমে এটিই ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, সংবাদ প্রতিদিনের সমীক্ষা অনুযায়ী বাগদায় তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুরের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উঠে এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল নিউজ কার্ডটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাগদায় এবার দিদির সৈনিক মধুপর্ণার কাছে হারতে চলেছে হাফপ্যান্ট মন্ত্রী শান্তনুর প্রার্থী।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুরের জয়ী হওয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিনের ভাইরাল নিউজ কার্ডটি ভুয়ো ও সম্পাদিত।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, আমরা ভাইরাল নিউজ কার্ডটিতে সংবাদ প্রতিদিনের লোগো দেখতে পাই। তাই আমরা খুঁজে বার করার চেষ্টা করি সংবাদ প্রতিদিনের তরফে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে এমন কোনও সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে কিনা। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে সংবাদ প্রতিদিনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট, এক্স হ্যান্ডেল, ইউটিউব চ্যানেল অথবা ওয়েবসাইট কোথাও এই সংক্রান্ত কোন পোস্ট বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি। এমনকি অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমেও আমরা বাগদা উপনির্বাচন সংক্রান্ত কোনও সমীক্ষা দেখতে পাইনি। যা থেকে অনুমান করা যায় যে ভাইরাল নিউজ কার্ডটি ভুয়ো হলেও হতে পারে।
পক্ষান্তরে, গত ৯ জুলাই বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন নিয়ে আমরা সংবাদ প্রতিদিনের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। যার শিরোনামে লেখা হয়েছে, “লড়াই জিতে বিধানসভায় যাবেন মমতাবালাকন্যা মধুপর্ণা?” এই প্রতিবেদনের শিরোনামে প্রশ্নচিহ্নের মাধ্যমে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে নির্বাচনের ফলে যে কেউ জয়ী হতে পারে। তবে সেখানে গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বাগদার সামগ্রিক ফলাফাল তুলে ধরা হয়েছে।
তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, “২০২৪-এর বনগাঁ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের হয়ে লড়ে বিশ্বজিৎ দাস এই বাগদা থেকে পেয়েছিলেন ৯২ হাজারের কিছু বেশি ভোট। বিজেপির শান্তনু ঠাকুর পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭০০ ভোট। তৃণমূল পিছিয়ে ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। অন্যদিকে তেইশের পঞ্চায়েত ভোটে বাগদা ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপির দখলে যায় মাত্র ৩টি।” অর্থাৎ সংবাদ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাগদা কেন্দ্রে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে যে কড়া টক্কর হতে চলেছে সেটিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ থেকে আরও বেশি নিশ্চিত হওয়া যায় যে নিউজ কার্ডটি ভুয়ো হতেও পারে।
তবে সে বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে এরপর আমরা ভাইরাল নিউজ কার্ডটির সঙ্গে সংবাদ প্রতিদিনের অন্য একটি নিউজ কার্ডকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করি। তখন আমরা উভয়ের মধ্যে একাধিক অমিল দেখতে পাই। প্রথমত, সংবাদ প্রতিদিনের নিউজ কার্ডে ব্যবহৃত ফ্রন্টের সঙ্গে ভাইরাল নিউজ কার্ডের ফ্রন্টের কোনও মিল নেই। দ্বিতীয়ত, ভাইরাল নিউজ কার্ডে সংবাদ প্রতিদিনের যে লোগো ব্যবহার করা হয়েছে সেটির পিছনের অংশ অস্পষ্ট। দেখলে বোঝা যায় সেটি এডিট করে বসানো হয়েছে। অথচ সংবাদ প্রতিদিনের আসল নিউজ কার্ডে লোগোটি অনেক স্পষ্ট।
এরপর আমরা এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সংবাদ প্রতিদিনের অফিসে যোগাযোগ করি। তখান সেখান থেকে আমাদের জানানো হয় যে, ভাইরাল নিউজ কার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। কেউ সংবাদ প্রতিদিনের লোগো ব্যবহার করে নিউজ কার্ডটি বানিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে। সংবাদ প্রতিদিনের তরফে বাগদা-সহ চারটি বিধানসভা উপনির্বাচনে কোনও সমীক্ষা করা হয়নি।
এর থেকে স্পষ্ট হয় বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর জয়ী হচ্ছে বলে সংবাদ প্রতিদিনের যে নিউজ কার্ডটি শেয়ার করা হয়েছে সেটি ভুয়ো ও সম্পাদিত।
সংবাদ প্রতিদিনের সমীক্ষা অনুযায়ী বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুর।
বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মধুপর্ণা ঠাকুরের জয়ী হওয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিনের ভাইরাল নিউজ কার্ডটি ভুয়ো ও সম্পাদিত।