scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: ঢাকার হিন্দু হস্টেলে ছাত্রদের উপরে হামলার দাবিতে ভাইরাল ভিডিয়োটি অসত্য

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে সেটি ঢাকার হিন্দু হস্টেলে হিন্দু ছাত্রদের উপরে হামলার দৃশ্য।

Advertisement

বিগত বেশ কিছুদিন ধরে কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। আর সেই ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক হিংসা ও মৃত্যুর ঘটনাও সামনে এসেছে। তবে গত রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, এখন থেকে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মাত্র ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। এর আগে যা ছিল ৫৬ শতাংশ। 

আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে কোটা আন্দোলন সংক্রান্ত একটি ভিভিয়ো। যেখানে দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষ একটি বহুতল আবাসনের ছাদের কার্নিশ ও জলের পাইপ বেয়ে নামার চেষ্টা করছে। তাঁদের মধ্যে দুই-একজন নামার সময় হাত ফসকে পড়েও গিয়েছেন। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিয়োটি ঢাকার হিন্দু হস্টেলের এবং সেখানে হিন্দু ছাত্রদের উপরে হামলা করেছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিয়োটি শেয়ার করে লিখেছেন, “হিন্দু হোস্টেল ঢাকা তে, জামাতের আক্রমণ এ কিভাবে হিন্দু ছাত্রগুলো কার্নিশ ধরে ঝুলছে দেখুন । কতজন উপর থেকে পড়ে গেল দেখুন।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভিডিয়োটি ঢাকার হিন্দু হস্টেলের নয়। বরং সেটি চট্টগ্রামের একটি আবাসনের ছাদে বাংলাদেশের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের উপর কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের হামলার দৃশ্য। এই ঘটনায় কোনও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক যোগ নেই। 

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ ও এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম মাছরাঙা নিউজের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিয়োটি দেখতে পাই। সেখানে ভিডিয়োটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের ফেল দিল কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী। যারা গ্রীল ঝুলে ছিল তাঁরা যাতে পড়ে যায় তার জন্য আন্দোলনকারীদের তরফে পাথরও ছোড়া হয়।

Advertisement

এরপর আমরা গত ১৮ জুলাই এই একই ভিডিয়ো দেখতে অপর এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম কালবেলার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও। সেখানে ভিডিয়োটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, “চট্টগ্রামের মুরাদপুর উপজেলায় গত মঙ্গলবার কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের ফেলে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন ১৫ জন নেতা-কর্মী। চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

এরপর আমরা গত ১৮ জুলাই ভাইরাল ভিডিয়োর ফ্রেমের সঙ্গে হুবহু মিল-সহ একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই ‘bbarta24’ নামক অপর একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে। সেখানে লেখা হয়েছে, “চট্টগ্রামে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ছয়তলা ভবন থেকে ফেলে দেওয়া ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকিরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।”

পাশাপাশি প্রতিবেদনে আহতদের মধ্যে অনেকের নাম উল্লেখ করে আরও লেখা হয়েছে, “আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন সুদীপ্ত পাল, পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন মেহেদী হাসান, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ জুবায়ের, মো. আলমগীর হোসেন, মো. সোহেল ও শ্রাবণ। এর মধ্যে জালাল ও আলমগীরের অবস্থা বেশ গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আহত বাকি নয় জনের মধ্যে আট জন পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অপরজন ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে।”

এরপর আমরা এই ঘটনা নিয়ে গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজেও একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে এই ঘটনার একটি ছবি-সহ লেখা হয়েছে, “চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় একটি পাঁচতলা ভবন থেকে ছাত্রলীগের অন্তত ১৫ জন কর্মীকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাদ থেকে মাটিতে পরার পরও তাদের পেটানো হয়।” 

উপরে উক্ত কোনও প্রতিবেদন বা বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের ফেসবুক পোস্টে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ধর্মীয় যোগ পাওয়া যায়নি। বরং সেখানে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় আহতদের কয়েকজন হিন্দু হলেও বেশিরভাগই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। পাশাপাশি ভাইরাল পোস্টে ঘটনাটি ঢাকার হিন্দু হোস্টেলের দাবি করা হলেও সংবাদমাধ্যমের তথ্য ও আওয়ামী লীগের ফেসবুক পোস্ট থেকে এটা স্পষ্ট ঘটনাটি চট্টগ্রামের একটি আবসনে ঘটেছে। ঢাকার কোনও হিন্দু হস্টেলে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা, বা ঢাকায় আদৌ কোনও হিন্দু হস্টেল রয়েছে কিনা, এ বিষয়েও আমরা একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করেছিলাম। কিন্তু এমন কোনও ফলাফল মেলেনি যেখানে উল্লেখ করা হয় যে ঢাকায় আদৌ এমন কোনও হিন্দু হস্টেল রয়েছে এবং সেখানে এহেন ঘটনা ঘটেছে। 

এর থেকে প্রমাণ হয় ঢাকার হিন্দু হস্টেলে হিন্দু ছাত্রদের উপরে হামলা দাবি করে যে ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে সেটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার হিন্দু হস্টেলে হিন্দু ছাত্রদের উপরে হামলার দৃশ্য।

ফলাফল

ভিডিয়োটি ঢাকার হিন্দু হোস্টেলের নয়। বরং সেটি চট্টগ্রামের একটি আবাসনে ছাত্রলীগ নেতাদের উপর কোটা আন্দোলনকারীদের হামলার দৃশ্য। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement