৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে কয়েকদিন ধরে। এই ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পতাকা উত্তোলনের সময় পতাকাটি উপরে তোলার পর তা আটকে গেছিল। গিঁট খুলছিল না কিছুতেই। দাবি অনুযায়ী, তখন নাকি একটি কাক পতাকার খুঁটির কাছে এসে সেই দড়ির গিঁট খুলে দিয়ে চলে যায়।
এই ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকেই এমন দাবি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "#স্বাধীনতা_দিবসের দিন পতাকা তোলার সময় আটকে গেলে একটি #পাখি এসে পতাকাটি খুলে দিয়ে যায়। সত্যি এক অসাধারণ ও আশ্চর্যের বিষয়। ঘটনাটি হয়েছে কেরলের একটি স্থানে, ভারত সত্যি খুব সুন্দর দেশ, এখানে পশু-পাখিরাও দেশকে ভালোবাসে,দেখে সত্যি ভালো লাগলো।"
কেউ আবার এই একই ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, "কেরালা - জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে শীর্ষে আটকে গেল। একটা পাখি কোথা থেকে এসে খুলে দিল!!"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এখানে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের কারণে এই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। একই জায়গার অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে রেকর্ড হওয়া ভিডিওতে দেখা যাবে, পাখিটি আসলে পাশের গাছে এসে বসেছিল। পতাকার কাছে আসেনি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
২৫ সেকেন্ডের এই ভাইরাল ভিডিওটির ১৭তম সেকেন্ডে, যখন রশি ধরে টান মারা হচ্ছে, তখন এক ঝলক লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে কাকটি পতাকার পিছনে থাকা নারকেল গাছে ডালে বসে রয়েছে। এর থেকে আন্দাজ করা যায় যে ১৪ সেকন্ডের মাথায় কাকটি পিছনের নারকেল গাছে এসে সম্ভবত বসেছিল।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল-যদি সত্যিই এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকত, তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনও না কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আমাদের মালায়ালি সহকর্মী জানান, যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছিল, তখন কাউকে 'হাত তালি দাও' বলতে শোনা যায়। এ সময় শিশুরা হাততালি দেয়। তখনই ওই কাকটিকে উড়ে যেতে দেখা যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আমরা কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট পাই যা ইঙ্গিত করে যে ভাইরাল ভিডিওটি মালাপ্পুরম জেলার মাম্বাদুতে একটি অঙ্গনওয়াড়ি থেকে তোলা হয়েছিল। আমরা যখন এই সূত্র ব্যবহার করে তদন্ত করি, তখন জানতে পারি যে মাম্পট পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শিহাব জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এরপর আমরা শিহাবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা আরেকটি ভিডিও পাঠান একই ঘটনার। সেখানেই পুরো বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
শিহাব জানান, "এটি মারামাঙ্গলামের কাট্টুমুন্ডায় অঙ্গনওয়াড়ি থেকে ধারণ করা দৃশ্য। আমি এখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছি। এই ভাইরাল ভিডিওটি এমন জায়গা থেকে রেকর্ড করা হয়েছে যে মনে হচ্ছে কাকটি পতাকার কাছে এসেছিল। কিন্তু ভিডিওটি খুব মন দিয়ে দেখুন বুঝতে পারবেন পতাকা থেকে একটু দূরে একটা নারকেল গাছে এসে কাকটি বসেছিল।"
এই ঘটনাটি নিয়ে দক্ষিণী সংবাদ মাধ্যম এশিয়ানেট নিউজও একটি রিপোর্ট করেছিল যেখানে ঘটনাটি পরিষ্কার করে বলা হয়। নীচে সেই ভিডিওটি দেখা যাবে।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে ভাইরাল ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর দাবি-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
কেরলে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় তা যখন আটকে যায় তখন একটি কাক এসে গিঁট খুলে দিয়ে যায়।
ভিডিওটি এমন অ্যাঙ্গেল থেকে রেকর্ড করা হয়েছে যার জন্য বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অন্য জায়গা থেকে রেকর্ড হওয়া একই ভিডিওতে দেখা গেছে কাকটি অদূরে নারকেল গাছে এসে বসেছিল।