scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: সম্প্রতি ‘কোটা’ বাতিলের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানুন

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

কোটা বা সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। হিংসার আগুন এতটাই তীব্র হয়েছে যে ক্রমশ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দেশটিতে আন্দোলনের জেরে বলি হয়েছেন ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। তবে ভারত-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০০।

আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে কোটা বাতিল করা সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের একটি ভিডিয়ো। ভিডিয়োতে দেশটির সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, “কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে বিসিএস-এর নিয়োগ হবে।” ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে সেটির ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “এইমাত্র পাওয়া খবর। সব কোটা বাতিল করলেন।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।  ভিডিয়োটি শেয়ার করে ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী এটাই ইঙ্গিত করেছেন যে, সম্প্রতি চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছেন।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক নয়। বরং সেটি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের। সেই সময় কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুলতে বাংলাদেশের সংসদে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, ভাইরাল ভিডিয়োটি গত ১৭ জুলাই পোস্ট করা হয়েছে এবং সেখানে দাবি করা হয়েছে এইমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ-সহ কোনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা বাতিল হওয়া সংক্রান্ত কোনও প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাইনি। পক্ষান্তরে প্রথম আলো-সহ বিভিন্ন বাংলাদেশি গণমাধ্যমে ১৭ তারিখের পরেও কোটা বিরোধী আন্দোলন ও তার জেরে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর থেকে আমরা অনুমান করি যে ভাইরাল ভিডিয়োটি সাম্প্রতিক না হয়ে পুরনো হতেও পারে।

Advertisement

তাই ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ ও এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম যমুনা টিভির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিয়োটির মূল সংস্করণটি খুঁজে পাই। ১৩ মিনিট ১৮ সেকেণ্ডের সেই ভিডিয়োর ৯ মিনিটে আমরা লক্ষ্যে করি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির সংসদে সেই সময় কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে তৈরি হওয়া হিংসা ও বিশৃঙ্খলাকে তীব্র নিন্দা করেন। এবং কোটা ব্যবস্থাকে বাতিল করার ঘোষণা করেন।

এরপর আমরা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল DW-এর একটি প্রতিবেদনেও এই একই তথ্য খুঁজে পাই। সেখানে সংসদে দেওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন৷ জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন৷”

তবে এখানে উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার কোটা বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০২১-এ হাইকোর্টে যান সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন। গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তবে ২০১৮-এর সেই নির্দেশনামা নিয়ে সম্প্রতি ফের একবার মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বিবিসি বাংলার তরফে তাঁর করা মন্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা বলেছেন, “২০১৮ সালে আন্দোলনের সময় রাস্তায় ধংসাত্নক কর্মসূচি, মানুষের ওপর হামলা, মিথ্যাচারসহ বিভিন্ন কারণে বিরক্ত হয়ে তখন কোটা বাতিল করে দিয়েছিলাম। আর এখন বিষয়টি আদালতের ওপর।” 

তবে এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী আদালতের কাছে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ কোটার প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এর থেকে স্পষ্ট হয় যে সাম্প্রতিক দাবি করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা বাতিল করা সংক্রান্ত মন্তব্যের যে ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়েছে তা ৬ বছর পুরনো। কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেটিকে সাম্প্রতিক দাবি করে শেয়ার করেছেন। 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

সম্প্রতি কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিয়োটি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের। সেই সময় কোটা বিরোধী আন্দোলন তুলতে বাংলাদেশের সংসদে এই ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement