scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: সাইন্স সিটি মোড়ে 'ভূতুড়ে' গাড়ি! না, ভিডিওটি জয়পুরের, জানুন এমনটা কেন হয়...

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ঘটনাটি কলকাতার সাইন্স সিটির নয়, বরং জয়পুরের। সেই সঙ্গে এটি কোনও ভূতুড়ে কাণ্ড নয় বরং আগুন লাগার ফলে ব্রেকিং সিস্টেম ফেলিওয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। 

Advertisement

চলন্ত গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। ইদানীং মাঝে-মধ্যেই এমন ঘটনা চোখে পড়ে। তবে এ বার এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি আগুনে জ্বলতে থাকা গাড়িকে রাস্তার উপর আপনা থেকেই চলতে দেখা যাচ্ছে।ভিডিওটি পোস্ট করে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন যে এটি কলকাতার সাইন্স সিটি মোড়ের ঘটনা। 

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ফ্লাইওভারের উপর একটি গাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে এবং অদূরের দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে একদল উৎসাহী জনতা। কিন্তু ফ্লাইওভারের রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িটি আচমকা সামনের দিকে এগোতে শুরু করে। সেই দৃশ্য দেখে পড়ি-মরি করে দৌড় দেয় জনতার জটলা। এরপর গাড়িটি কিছুদূর এগিয়ে ফ্লাইওভার থেকে নেমে যায়।

এই ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আজ সায়েন্স সিটির মোড়ে ভূতের গাড়ি চালানো। শিহরিত জনগণ।" (বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ঘটনাটি কলকাতার সাইন্স সিটির নয়, বরং জয়পুরের। সেই সঙ্গে এটি কোনও ভূতুড়ে কাণ্ড নয় বরং আগুন লাগার ফলে ব্রেকিং সিস্টেম ফেলিওয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। 

কীভাবে জানা গেল সত্যি

ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করতে আমরা ওই ভিডিও-সহ খবর দেখতে পাই একাধিক সংবাদ মাধ্যমে। হিন্দুস্তান টাইমস থেকে শুরু করে ইকনোমিক টাইমসের মতো সংবাদ মাধ্যমগুলিতে ১৩ অক্টোবর প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে লেখা হয় যে ঘটনাটি জয়পুরে আজমের রোডে ঘটেছিল। 

সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গাড়িটি জিতেন্দ্র জানগির নামের এক ব্যক্তি চালাচ্ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, জিতেন্দ্র ফ্লাইওভারে ওঠার পর লক্ষ্য করেন যে গাড়ির বাতানুকুল যন্ত্র দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দুশ্চিন্তায় পড়ে জিতেন্দ্র নিজের ভাইকে ফোন করলে তিনি বলেন বনেট খুলে গাড়ির ইঞ্জিন পরীক্ষা করতে। গাড়ি থেকে নেমে বনেট খুলতেই জিতেন্দ্র দেখেন গাড়ির ইঞ্জিনে আগুন ধরে গিয়েছে যা কয়েক মুহূর্তে গোটা গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্টিক থেকে এই আগুন লেগেছে অনুমান করা গেলেও সুনির্দিষ্টভাবে খবর লেখা পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। 

Advertisement

ভূতুড়ে চালকের রহস্য

যেহেতু সেই মুহূর্তে গাড়িতে কোনও চালক ছিলেন না এবং গাড়িটি নিজের থেকেই চলতে শুরু করেছিল, তাই এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। খবর অনুযায়ী, হ্যান্ডব্রেক বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে গাড়িটি চলতে শুরু করে দিয়েছিল। 

তবে কেন এমনটা হতে পারে, অর্থাৎ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি কীভাবে আচমকা চলতে শুরু করতে পারে, এই নিয়ে বিশদে জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। অবিনাশ কর নামের এক আন্তর্জাতিক অটোমোবাইল সংস্থায় কর্মরত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমাদের জানান, বেশ কয়েকটি সম্মিলিত কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। 

এই বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অবিনাশ বলেন, একটি অত্যাধুনিক গাড়ির ব্রেকিং সাধারণ ব্রেকের মতো কাজ করে না। বরং নানা জটিল পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে ব্রেকিং কাজ করে। যার মধ্যে অন্যতম ব্রেক ফ্লুইড বা তরল। এই তরল ব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে হাইড্রলিক প্রেসার তৈরিতে সাহায্য করে। এমন বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের সময় সাধারণত এই তরল প্রচন্ড গরমে বাষ্পে পরিণত হয়। বা ফ্লুইড চেম্বার থেকে তা লিকও হতে পারে। এর ফলে যে হাইড্রলিক প্রেসারের কারণে গাড়ির চাকা আটকে থাকে, তা কমে যায় ও ব্রেকিং ক্যাপিলার ঢিলে হয়ে যায়। যার কারণে কোনও ধরনের ব্রেকিং সিস্টেম কাজ করে না। আর এই জায়গায় ফ্লাইওভার ঢালু হওয়ার কারণে গাড়ি গড়িয়ে গিয়েছিল। 

এ ছাড়াও তিনি জানান যে এখনকার গাড়িগুলি ABS ব্রেকিং ব্যবস্থা ব্যবহার হয় যা পুরোপুরি ইলেকট্রিকের উপর নির্ভরশীল। এই প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে ইলেকট্রিক তার ও সরঞ্জাম জ্বলে গিয়ে, বা সেন্সর খারাপ হওয়ার কারণে ব্রেক কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। 

সবশেষ অবিনাশ যোগ করে বলেন, ব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে সবথেকে শেষের স্তরে ব্রেক প্যাড, পিস্টন এবং ব্রেক টিউবের মতো জিনিস ব্যবহার হয়। এগুলির বেশিরভাগ ৫০০ সেন্টিগ্রেটের বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। যেখানে একটি গাড়িতে যখন এমন প্রকাণ্ড আগুন লাগে তার তাপমাত্রা ১০০০ ডিগ্রির বেশি সেন্টিগ্রেটে পৌঁছে যেতে পারে। এই অবস্থায় সেই সরঞ্জামগুলি গলে যাওয়াই স্বাভাবিক। তখন কোনও ভাবেই ব্রেকিং ঠিকমতো কাজ করবে না ও গাড়ি সমতল জায়গায় না থাকলে তা ঢালু দিকে গড়িয়ে যাবে। 

অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, জয়পুরের একটি ঘটনার ভিডিওকে কলকাতার সাইন্স সিটি মোড়ের ঘটনা দাবি করে বিভ্রান্তিকরভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। 

 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

কলকাতার সাইন্স সিটি মোড়ে ভূতুড়ে কাণ্ড, নিজের থেকে চলছে জ্বলন্ত গাড়ি। 

ফলাফল

এই ঘটনাটি গত ১২ অক্টোবর জয়পুরে ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, আগুন লাগার কারণে হ্যান্ডব্রেক বিকল হয়ে যাওয়ায় ফ্লাইওভারের ঢালু দিকে গাড়ি গড়িয়ে যায়। 

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement