গত অক্টোবর মাসেই বড় ঘোষণা করেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তিনি জানান, এখন থেকে তাঁর সংস্থার নাম 'ফেসবুক' থেকে বদলে 'মেটা' হতে চলেছে। যদিও সংস্থার নাম বদলের জেরে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নাম বদলে যায়নি। বদলেছে শুধু এর সংস্থার নাম। তবে এর ফলে একটা বড় অংশের ব্যবহারকারী বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
গত কয়েকদিন যাবৎ একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হচ্ছে। সেই পোস্টের মোদ্দা বক্তব্য হল- এই মেসেজটি নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করলে নাকি ফেসবুক কোনও প্রোফাইলের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি বা অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে মামলাও করা যেতে পারে!
ভাইরাল সেই পোস্টে লেখা হচ্ছে, "আগামীকাল থেকে নতুন ফেসবুক/মেটা নিয়ম শুরু হবে যেখানে তারা আপনার ছবি ব্যবহার করতে পারবে। ভুলে যাবেন না, আজ শেষ দিন! তাই একটা কাজ করে রাখুন। এটি আপনার বিরুদ্ধে মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে; আপনি যা কিছু পোস্ট করেছেন - এমনকি মেসেজ যা মুছে ফেলা হয়েছে। এতে কোন খরচ নেই, শুধু কপি করে পোস্ট করুন, পরে আফসোস করার চেয়ে ভালো হবে। ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮... আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি...আমি ফেসবুক/মেটা বা অন্য কোন ফেসবুক/মেটা সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আমার ছবি, তথ্য, বার্তা বা বার্তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না, অতীতে এবং ভবিষ্যতে কোন সময়েই। এই পোস্টেটি কপি করে আপনার নিজের পেজে পোস্ট করে রাখুন এবং ঘোষণা দিন যে, আপনি ফেসবুক/মেটা-কে তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা আমার তথ্য অন্য কোথাও শেয়ার করার অনুমতি দিচ্ছি না। ছবি, বর্তমান বা অতীত, বন্ধু-বান্ধব, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস, ব্যক্তিগত কোন তথ্য বা পোস্ট এ সবের কোন কিছুই আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া ভিন্নরূপে ব্যবহার করা যাবে না।"
এই পোস্টের আর্কাইভ এখানে এখানে এবং এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে, এই ধরনের দাবি বিভ্রান্তিকর। ফেসবুকের সংস্থার নাম পরিবর্তন হলেও তাদের নীতি নির্ধারণগত পদ্ধতিতে কোনও বদল আনা হয়নি। এবং এই ধরনের মেসেজ কপি-পেস্ট করা আসলে নিরর্থক।
আফয়া অনুসন্ধান
তদন্তে নেমে সবার প্রথম আমরা ফেসবুকের তথ্য নীতি (ডেটা পলিসি) খতিয়ে দেখি। সেখানে প্রথমেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার করে দেওয়া হয়, "ফেসবুকের সংস্থার নাম এখন থেকে 'মেটা'। নাম পরিবর্তন হলেও আমাদের পরিষেবার পদ্ধতি, তথ্য় নীতি এবং পরিষেবার শর্ত আগের অনুরূপ থাকছে। সেখানে কোনও বদল আসছে না।"
সুতরাং, যে বিষয়টি এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় তা হল- ইদানীং সময়ে ফেসবুক নিজের নীতিতে কোনও পরিবর্তন আনেনি। এবার প্রশ্ন হল- গ্রাহকদের (এ ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবকারী) তথ্য সম্পর্কিত গোপনীয়তা বজায় রাখতে ফেসবুক ঠিক কী নীতি নিয়ে চলে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় ফেসবুকের পরিষেবা প্রদানের শর্ত (টার্মস অব সার্ভিসেস) বিভাগে। যেখানে লেখা ছিল, ফেসবুক কোনও ব্যবহারকারীর কোনও ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য, বা এমন কোনও বিষয় কারোর সঙ্গে ভাগ করে না যার মাধ্যমে কারোর গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে। শুধুমাত্র যদি কোনও ব্যবহারকারী কিছু বিষয়ে বিজ্ঞাপন করার অনুমতি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে দেন, তখনই সেই তথ্য ফেসবুক অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। ফেসবুকে প্রোফাইল তৈরি করার সময়ই প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য এই শর্ত আরোপ করা হয়ে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, কোনও মেজেস টাইমলাইনে কপি-পেস্ট করলে সেটা বদলে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে সম্প্রতি যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা একই বার্তা কপি-পেস্ট করছেন, তার কি বাস্তবে কোনও ভিত্তিই নেই? এক কথায় যদি উত্তর দিতে হয়, তবে না। নেই। কারণ আমরা যখন বিষয়টি সম্পর্কে বুঝতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করি, তখন এমন কিছু ফলাফল আমাদের সামনে উঠে আসে, যেখানে দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই একই পোস্ট ইংরাজিতে ভাইরাল হয়েছে। তবে ফেসবুক সংস্থার নাম 'মেটা' হওয়ার পর সম্ভবত বাংলায় এই প্রথমবার এমনটা দেখা যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে আমরা আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যেখানে এক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের প্রাক্তন কর্মচারীরা জানান, এই ধরনের মেসেজের বাস্তবের সঙ্গে যোগসূত্র নেই। এই প্রসঙ্গেই বলে রাখা যায়, ফেসবুকে আপনার কোন তথ্য কে দেখতে পাবেন, এবং নিজের প্রোফাইলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত করবেন, সেই বিষয়টি যে কোনও ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেই প্রাইভেসি চেকআপ-এ গিয়ে ঠিক করতে পারেন।
সুতরাং, এ কথা বলাই যায় যে ফেসবুক বা মেটা নিয়ে যে ধরনের তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীন।
ফেসবুক/মেটার নতুন নিয়ম শুরু হচ্ছে যেখানে সংস্থা কোনও ব্যক্তির ছবি ব্যবহার, এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য মামলার কাজেও ব্যবহার করতে পারবে। মেসেজটি টাইমলাইনে কপি-পেস্ট করলে তা আটকানো সম্ভব।
ফেসবুক সংস্থার নাম পরিবর্তন করা হলেও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির তথ্য নীতি বা পরিষেবা প্রদানের শর্তাবলির ক্ষেত্রে কোনও বদল আসেনি। এই ধরনের গুজব আগেও রটেছে। কিন্তু এই ধরনের মেসেজ কপি-পেস্ট করার মাধ্যমে কিছুই হয় না। গোটা বিষয়টি আদতে ভিত্তিহীন।