সুরাজউদ্দিন মণ্ডল: হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধের মধ্যে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে অবস্থিত ইরানি দূতাবাসে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। সেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু হয় সাত জনের। যাঁদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর দুই জেনারেলও। তারই প্রতিবাদে গত শনিবার গভীর রাতে ইজরায়েলে শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ফলে হামাস-ইজরায়েল লড়াই এখন পরিণত হয়েছে ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধে।
আর ইরান ইজরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে যুদ্ধ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিয়ো। সেই সব ভিডিয়োর মধ্যে একটিতে কোনও এক শহরে আগুন জ্বলতে এবং সেই আগুন থেকে ধোঁয়া বার হতে। পাশাপাশি ভিডিয়োটি ভালো করে লক্ষ্য করলে সেখানে কিছু অ্যাম্বুলেন্স বা দমকলের গাড়িও দেখা যাচ্ছে। ভিডিয়োটি ইজরায়েলের উপরে ইরানের হামলার দৃশ্য দাবি করে শেয়ার হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিয়োটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “ইসরাইলের স্থাপনায় ইরানের ভয়াবহ মিসাইল হামলা।” এবং তার পোস্ট করা সেই ভিডিয়োর ফ্রেমে লেখা হয়েছে, “ইসরাইলের স্থাপনায় ইরানের হামলার দৃশ্য।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োটি ইজরায়েলের উপরে ইরানের হামলার দৃশ্য নয়। বরং সেটি গত ১ এপ্রিল ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের দুহোক শহরের চেলা বাজারে আগুন লাগার দৃশ্য।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ইজরায়েলের উপরে ইরানের হামলার দৃশ্য দাবি করে যে ভিডিয়োটি শেয়ার করা হয়েছে সেটির সত্যতা জানতে আমরা ভিডিয়োটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড ও কী-ফ্রেম সার্চ করি। কিন্তু আমরা আমাদের সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাইনি যা থেকে প্রমাণ করা সম্ভব হয় যে ভিডিয়োটি ইরানের হামলার পর ইজরায়েলের কোনও জায়গার দৃশ্য।
তবে কিওয়ার্ড ও কী-ফ্রেম সার্চ করার সময় আমরা গত ১ এপ্রিল টুইটারে এই একই ভিডিয়ো সহ একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেখানে ‘কুর্দিস্তান ক্রোনিক্যাল’ নামক ইরাকি সংবাদমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক সর্দার সত্তার ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন, “কুর্দিস্তান প্রদেশের দুহোক শহরের কেন্দ্রস্থলে আজকের আগুন লাগার দৃশ্য।” আর সেই ভিডিয়োর নীচে তিনি একটি ছবিও পোস্ট করেছেন। আর ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “ডুহোক শহরের অগ্নিকাণ্ডে ১৫০দোকান ভস্মীভূত হয়ে গেছে।”
#Kurdistan | An aerial view of today’s fire outbreak in downtown Duhok, Kurdistan Region. https://t.co/rDtTV3O3sA pic.twitter.com/gypiUeqPzH
— Sardar Sattar (@SardarSattar) April 1, 2024
এরপর আরও নিশ্চিত হতে আমরা টুইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে ফের একবার একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন গত ১ এপ্রিল, স্কাই নিউজ ও শাফাক নিউজের দুটি প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসে। উভয় প্রতিবেদনেও টুইটারে প্রাপ্ত তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে। স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “ইরাকের দুহোকের চালে বাজারে বিশাল অগ্নিকাণ্ড। আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে ১৪০ টিরও বেশি দোকান। আগুন নেভাতে সাহায্য করেছে প্রায় ৪০০-র বেশি মানুষ। আগুনের কারণে শ্বাসকষ্টে ভোগা বহু মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে জানা না গেলেও স্থানীয় দোকানদের অনুমান শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লেগেছে।”
অন্যদিকে শাফাক নিউজের প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডের একাধিক ছবি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “সোমবার ভোরে ইরাকের কুর্দিস্তানের দুহোক শহরের চালে বাজারে ব্যাপকভাবে আগুন লাগে। দুহোকের গভর্নর আলি তাতার জানিয়েছেন যে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫০ টিরও বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, ইজরায়েলের উপরে ইরানের হামলার দৃশ্য বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিয়োটি ভুয়ো। সেটি গত ১ এপ্রিল ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের দুহোক শহরের চালে বাজারে আগুন লাগার ভিডিয়ো।
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলার দৃশ্য।
ইজরায়েলের উপরে ইরানের হামলার দৃশ্য বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিয়োটি ভুয়ো। আসলে ভাইরাল ভিডিয়োটি গত ১ এপ্রিল ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের দুহোক শহরের চালে বাজারে আগুন লাগার দৃশ্য।