গত কয়েক মাসে রাজ্য রাজনীতি ঘুরপাক খেয়েছে সন্দেশখালিতে ঘটা একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যেখানে নতুন সংযোজন একটি স্টিং অপারেশনের ভিডিও। সত্যতা যাচাই না হওয়া যেই ভিডিওতে বিজেপির স্থানীয় এক নেতাকে বলতে শোনা গেছে যে টাকার বদলে যৌন নির্যাতনের মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে সেখানকার মহিলারা।
সেই সূত্র ধরেই এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে হেনস্থা করছে কিছু মানুষ। শেষে কোনও মতে রেখা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছেন। বেরনোর সময় তিনি সংবাদ মাধ্যম ও স্থানীয় এক-দুজনের সঙ্গে কথাও বলেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সন্দেশখালির স্টিং অপারেশন কাণ্ড সামনে আসার পর সন্দেশখালির বাসিন্দারা নাকি এভাবেই রেখা পাত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
ভিডিও-র ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "সন্দেশখালির ২০০০ টাকার নায়িকা রেখা পাত্রকে পালিশ করে পিঠে খাওয়াচ্ছে সন্দেশখালির বাসিন্দারা।" ভিডিওটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
অর্থাৎ বোঝাতে চাওয়া হয়েছে যে তথাকথিত সেই স্টিং অপারেশনের ভিডিও সামনে আসার পর রেখাকে এভাবে আক্রমণ করেছে সন্দেশখালির বাসিন্দারা।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এই ভিডিওটি স্টিং অপারেশন প্রকাশ্যে আসার ৫ দিন আগেকার। এবং ভিডিওটি সন্দেশখালি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর একটি গ্রামের।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিওটি দেখতে পাই। যেমন, এবিপি আনন্দের ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩০ এপ্রিল এই ঘটনার ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিও-তে লেখা হয়, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী যখন প্রচার করতে যখন খড়িডাঙা পৌঁছন, তখন তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মহিলারা। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ঘটনাটি সন্দেশখালির হলে সেখানে তাই লেখা থাকত কিন্তু এখানে জায়গার নাম লেখা ছিল খড়িডাঙা।
আনন্দবাজার পত্রিকার ডিজিটালের প্রতিবেদনেও একই তথ্য প্রকাশ করা হয়। লেখা হয় রেখার উপর এই হামলার ঘটনা ঘটেছিল খড়িডাঙা নামের একটি গ্রামে যা বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এ ছাড়াও এই সময়, এবং হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার প্রতিবেদনেও ঘটনাস্থল খড়িডাঙা বলেই উল্লেখ করা হয়।
গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে আমরা জানতে পারি যে এই খড়িডাঙা গ্রামটি সন্দেশখালি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ, এই ঘটনার সঙ্গে যে সন্দেশখালির স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয় এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে দ্বিতীয় বিষয় হল, এই ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ এপ্রিল। অন্যদিকে, সন্দেশখালি-কাণ্ডে ভাইরাল স্টিং অপারেশনের বিষয়টি সাংবাদিক বৈঠক করে গত ৪ মে প্রকাশ্যে আনেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউজ১৮ বাংলা-সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এই সাংবাদিক বৈঠক প্রচার হয়।
ফলে এর থেকে গোটা বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, উক্ত ঘটনাটি কোনওভাবেই সন্দেশখালির নয় এবং এর সঙ্গে তৃণমূলের প্রকাশ করা স্টিং অপারেশনেরও কোনও সম্পর্ক নেই। বিভ্রান্তিকর দাবিতে এমন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সন্দেশখালি কাণ্ডে স্টিং অপারেশনের ভিডিও সামনে আসার পর সেখানকার বাসিন্দারা রেখা পাত্রকে হেনস্থা করছে।
এই ঘটনাটি ৩০ জুলাইয়ের। সন্দেশখালি স্টিং অপারেশন প্রকাশ্যে আসার ৫ দিন আগের। ঘটনাস্থল সন্দেশখালি নয়। বরং প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের খড়িডাঙা গ্রাম।